লিখেছেন ??? (তারিখ: সোম, ৩০/০৭/২০০৭ - ১০:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
আমার কপালে বুলেটের মত ঢুকে গিয়েছে তোমার মুখ
ক্ষতচিহ্নের রক্তপাত আঙুলে মুছে নিয়ে আমি নগরীর দেয়ালে দেয়ালে
বৃক্ষের বাকলে লিখছি তোমার নাম *
১৯৮৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হই। কবিযশপ্রার্থী তরুণ, বিপুল সাহসে একদিন কবি মোহাম্মদ রফিকের দরজায় টোকা মারি। দরজা যিনি খুলে দেন তিনি মোহাম্মদ রফিক নন, তার ছাত্র। হাসি-হাসি মুখ, যেন কতদিন ধরে চেনেন! জানলাম তার নাম কফিল আহমেদ এবং তিনি কবি। কথা হল মোহাম্মদ রফিকের সাথে এবং ঘটনাচক্রে তাঁর বাসা থেকে বের হলাম কফিল আহমেদ-এর সাথেই। মোহাম্মদ রফিকের বাসা থেকে আমার হল বড়জোর দশ মিনিটের রিকশাপথ। কিন্তু আমি কি জানতাম ঐটুকু রিকশাপথের উছিলায় কত লম্বা ভ্রমণে জড়িয়ে পড়ছি সদ্যপরিচিত এই কবির সাথে?
আস্তে আস্তে এই বিদ্যায়তন আমাকে তার গোপন ট্রাম্পকার্ডগুলো একে একে মেলে ধরতে লাগল। এ যাত্রা আমার সারথী কফিল আহমেদ। জানলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের বেলায় মোহাম্মদ রফিক দীপ্তি ছড়ান বটে, কিন্তু আঁধারের রাজা অন্য। যখন রাত্রি ঘনায়, ঝোপঝাড় থেকে ক্ষণে ক্ষণে ঝাপটা মারে দূর অতীতের কোনো পরাজিত সভ্যতার গন্ধ, উঁচু-নিচু বিষাদময় এই ল্যান্ডস্কেপের ড্রাকুলা তখন সুনীল সাইফুল্লাহ। তাকে সাক্ষি রেখে সারারাত টুপটাপ টুপটাপ মৌফুল ঝরে, হেলেদুলে রাস্তা পেরোয় বিশালবপু গুঁইসাপ। নির্ভীক ভ্যাম্পায়ারের মত রাতের ক্যাম্পাসে উড়াউড়ি শিখছি তখন। কফিল ভাই সুনীল সাইফুল্লাহর গল্প শোনান নিচু গলায়। আমি জাবি ক্যাম্পাসে পা-রাখার অর্ধযুগ আগে এই কবি আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই আত্মহত্যার সংকল্প কবিতায় ঘোষণা করেছিলেন তারও অর্ধযুগ আগে। আর আমি এমনভাবে শুনি যেন এটা গতকালমাত্র ঘটেছে। মানুষজন্মে এও কি সম্ভব সবিতা?
কফিল ভাই একে একে অনেককে চেনালেন। নিভৃতিচারী কবি শিমা, যিনি নারী নয়, বরং তালব্য শ-এর মধ্যে যৌন প্রণোদনা পেতেন। ছিলেন নন্দনতাত্ত্বিক কাআ, যিনি যে কোন অজুহাতে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারেন এই ভেবে শংকিত থাকতাম আমরা। মহিষের পিঠে চড়ে মাথার ওপর ঘূর্ণায়মান মশার দঙ্গল তাড়াতে গ্রাম থেকে ফিরতো জয় গোস্বামীর যে নায়কটি, জানলাম তার নাম ফআ। জানলাম তার ইনকামিং হয় সিরিঞ্জে আর আউটগোয়িং হয় কলমে। আর সে দশাসই লালচোখ যুবাটি তার বন্ধুর পক্ষে আমাকে রুম ছাড়ার হুমকি দিতে এসেছিল, জানলাম ভয়ালদর্শন চেহারার আড়ালে সেও লাজুক এক কবিমানুষ। মাপি। ক্যাম্পাসের সবাই তার গানের পাগলপারা শ্রোতা।
একদিন কফিল ভাই আমাকে শোনালেন তার কবিতা:
ওর বিবাহের দিনে বালুচরে মরেছিল বাঁশি
ওর বিবাহের দিনে শ্মশানের গাছপালা হাহাকার হাওয়ায় হাহা
সহমরণের চিতার ওপারে বাঘারঙ আকাশে আগুন
এসব পংক্তির অশরীরী শক্তি আমাকে কাঁপিয়ে দিল। বুঁদ করে রাখল, মুক ও বধির করে দিল। সমকালীন বাংলা কবিতার যে চেহারা আমি মফস্বলে বসে-বসে দৈনিক কাগজের পাতা জোড়া লাগিয়ে এঁকেছিলাম, ছুঁড়ে মারলাম জাহাঙ্গীরনগরের ঝিলের পানিতে। এরকম অনুভব আমার জন্য নতুন। উন্মাদনা পেয়ে বসল, এরকম কবিতা লিখে আমি কাঁপিয়ে দেব কবে?
মাহবুব পিয়াল ফোড়ন কাটল, আপনি তো প্রতিদিন কবিতা লিখেন। কবিতা কি প্রতিদিন লিখবার জিনিস?
তো? ঠিক আছে, দিলাম ছেড়ে।
প্রতিদিনের কবিতা লেখা ছেড়ে প্রতিরাতের অনিদ্রার খপ্পরে। বাতি নিভিয়ে সারারাত শুয়ে থাকি। পেঁচা ও তক্ষক ডাকে দেবদারুর ডালে, মধ্যরাতের বাতাস ঝাউ-এর ডালে ডালে অপার্থিব শোরগোল তৈরি করে। শেষরাতে লাইটপোস্টের আলোয় দলবেঁধে পোকা খেতে আসে শেয়ালের ঝাঁক। দূর মফস্বলে আমার মা তখন চারঘণ্টার ত্রস্ত ঘুম সেরে উঠে পড়েছেন, কফিল ভাইয়েরও ঘুম পাতলা হয়ে আসে বুঝি। ঘুমজড়ানো গলায় ডাকেন, ঘুমাও নাই?
না-ভাবা কবিতার ভাঁপে আমি তখন না ঘুমে, না জাগরণে।
চোখের নিচে কালি জমে। সিডেটিভস নিতে শুরু করি। কফিল ভাই আমাকে দেখেন তীক্ষ্ম চোখে। কী যেন ভেবে বললেন, তোমার শক্তি ন্যারেটিভে। ন্যারেটিভকে হেলাফেলা করো না, কবিতায় ন্যারেটিভ নিয়ে এখনও বহু কিছু করার আছে।
কিন্তু আমি তো বাঁশির বেদনা নিয়ে বালুচরে মুখ গুঁজে মরতে চাই। এখুনি।
কফিল ভাই হাসতে হাসতে একদিন বললেন, তুমি যাদের কবিতা পড়েছ তাদের মধ্যে জাতিসংঘ বিষয়ক খামোখা অভিমান আছে। আবুল হাসানের অভিমান তার সময়ের স্বাধীন নবীন বাংলাদেশের মতই ইমম্যাচিউরড। কিন্তু সুনীল সাইফুল্লাহ পড়ো, লোরকা পড়ো, এমনকি অভিমানী এসেনিন পর্যন্ত পড়ো। দেখবে ম্যাচুরিটি!
গীনসবার্গের "ম্যাচুরিটি" নামে একটি ছোট্ট কবিতা তখন অনুবাদ করেছেন কফিল ভাই:
যুবক বয়সে বীয়ার খেয়ে আমি সবুজ পিত্তবমি করতাম
আরো বড় হয়ে মদ খেয়ে আমি লাল রক্তবমি করতাম
এখন আমি বাতাসবমি করি
ঠিক হল পত্রিকা বের করব। কফিল ভাই, পিয়াল এবং আমি। মাথার ওপরে ছত্রছায়ার মত থাকবেন মোহাম্মদ রফিক। এটাই আপাতত টিম। পত্রিকার নাম "দামোদর" আর সম্পাদক মাহবুব পিয়াল। কফিল ভাই বললেন, পত্রিকার জন্য কবিতা লিখ। যা খুশি। কোনোরকম প্রি-অকুপেশন ছাড়া। কবিতার কোনো বাঁধাধরা গ্রামার নেই। শুধু "দুয়েন্দে" থাকলেই হয়।
ততদিনে লোরকার দুয়েন্দে-তত্ত্ব পড়া হয়ে গেছে।
আমাদের অন্য রুমসঙ্গীরা বেরিয়ে গেলে আমি আর কফিল ভাই লিখতে বসি। কফিল ভাই নিউজপ্রিন্টের তাড়ার ওপর ক্রমাগত লিখে যান। এক কবিতা তিনি নানাভাবে রি-রাইট করেন আর প্রতিবারই আমি মুগ্ধ হই। তারপরও রি-রাইট থেমে থাকে না। কখনও কাগজের তাড়াগুলো বালিশচাপা দিয়ে দোকানে ছোটেন সিগারেট আনার জন্য। কিংবা বলেন, চল একটু ঘুরে আসি। আমরা হাঁটি ক্যাম্পাসের নিরব রাস্তাগুলো বেছে বেছে। বহুক্ষণ কথা বলি না কেউ কারো সাথে। কিংবা কোনোদিন আমি ঢুকে পড়ি অডিটরিয়ামে টেবিল টেনিস খেলতে। কফিল ভাই একা-একা পায়চারি করেন হলের করিডোর ধরে। কখনও হঠাৎ আমার খেলা থামিয়ে দিয়ে বলেন, চাবি দাও। চাবি নিয়ে হনহন করে রুমের দিকে ছোটেন তিনি। বুঝি, কিছু একটা নাযিল হতে চলেছে।
আবার কখনও, সপ্তায়/দু-সপ্তায় একবার, তাকে খুব ধোপদূরস্ত দেখায়। থেকে-থেকে আয়নায় ঢুলূঢুলূ তাকান। মাথার চুল আঁচড়িয়ে নিজেই আবার পরম মমতায় তাকে এলোমেলো করে দেন। গুনগুন করে গাইতে থাকেন, আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলংকভাগী। দুপুরে আমাকে বলেন, ঢাকা যাবো। ও শাহবাগ আসবে চারটায়। কখনও সাথে নেন আমাকে, গিয়ে দেখি, স্নিগ্ধ একটি "কলংকভাগী" সেখানে বসে আছেন। মিষ্টি করে কুশল শুধান আমার। পরম আনন্দ হয় আমার, পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে বইপত্র ঘাঁটি। কফিল ভাই ফেরেন সন্ধ্যায়। কখনো প্রসন্ন, কখনো ধ্বস্ত। আমি জিজ্ঞাস করি না কিছু।
আমাকে যা করেছো তুমি
কেউ তা করে নি আগে
একদিন শাহবাগে কফিল ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন রিফাত চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, বিষ্ণু বিশ্বাস, আহমেদ মুজিব, খায়রুল হাবিব প্রমুখের সাথে। সমকালীন কবিতার সত্যিকার হেভীওয়েট তখন তারা। নিজেদের প্যারাফিন ট্রে-র মাঝে নিজেরাই সোনাব্যাঙ হয়ে গেঁথে আছেন। কাউকেই গ্রাহ্য করেন না। আমার মত পুঁচকে প্রাণীকে দেখে ভ্রু কোঁচকায় কারো কারো। আমি তো ভয়ে দুরু দুরু। একজন তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এ-কথাই বললেন, অল্প বয়স, এই ক্যাটাগরিতে টিকবে তো?
কেউ বাড়ি জিজ্ঞাস করায় বললাম, ভৈরব। শুনে রিফাত চৌধূরী সিরিয়াস গলায় বললেন, আমরা কিশোরগঞ্জের লোকেরাই এখন বাংলা সাহিত্য ডমিনেট করছি তাহলে, বুঝলেন? তার কথার পিঠেই আরেকজন (নাম মনে নাই) আপীল করলেন, কিশোরগঞ্জ না-বলে গ্রেটার ময়মনসিং বলা যায় না? পরে জেনেছিলাম তার বাড়ি নেত্রকোণা।
কিন্তু আপীল মানবেন কেন তারা? আশিতে আছেন কফিল আহমেদ, রিফাত চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, সুমন কায়সার (দারুণ প্রতিভাবান কবি, পরে পাগল হয়ে গিয়েছেন)। মাথার ওপরে আছেন কবি আলতাফ হোসেন, আবিদ আজাদ এবং শিহাব সরকার। মধ্যদিনের সূর্যের মতই তারা তখন কড়া এবং অবশ্যপাঠ্য। স্ট্যান্ডবাই আছেন দারুণ ক্ষমতাধর এবং মৌলিক আরো দুই কবি: আজিজুল হক এরশাদ এবং আশুতোষ ভৌমিক। ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রীতিমত হটলাইন, এগারসিন্ধুর ট্রেন দিনে দু’বার যাওয়া-আসা করে! কিশোরগঞ্জের তখন ব্রাজিলের মত ফর্ম!
কুউ ঝিক-ঝাক এগারো এগারো আরো
আরো এগারোসিন্ধুর ঢাকা আসছিলো
বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় হওয়ায় আমি বাই-ডিফল্ট এই ক্ষমতাবলয়ের লোক হয়ে গেলাম। সমস্যা হল পিয়ালকে নিয়ে, ওর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কী আর করা? প্রতিবেশী জেলা হওয়ায় সেও গ্রীনকার্ড পেল। এভাবে যে জিনিয়ালজি তৈরি হতে থাকল, সবচেয়ে বড় চমক ছিল তার গোড়াতে, একেবারে সূচনায়। বাংলাভাষার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। জয়তু কিশোরগঞ্জ!
কাঁপে হিয়া। চন্দ্রাবতী।
ভাঙ্গা বুক ছোঁয়াতেই
চোখ ফেটে
ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বয়ে
সব আনন্দ থমকে
তবু কি আনন্দ বইছে...
আমাদের এসব মশকরায় কফিল ভাই খুব অংশ নিতেন না। চুপচাপ বসে শুনতেন, কখনও বা উঠে হেঁটে আসতেন। রিফাত চৌধুরী মুচকি হেসে বলতেন, কফিল সবসময় সিরিয়াস। আমি মাথা নাড়ি সম্মতি জানিয়ে। ততদিনে বুঝে গেছি কবিতায় এবং জীবনে একইরকম সিরিয়াস তিনি। পলিটিক্যালি। বুর্জোয়া মূল্যবোধ ব্যক্তিকে যেমন কম্পার্টমেন্টাল করে ফেলে, কফিল আহমেদ তার বিপরীত। রাজনীতি, জীবন, কবিতা এবং হালে গানের যে কফিলীয় উদ্ভাস তাকে আলাদা আলাদা পাঠ করবার কোনো সুযোগ খুব বেশি নেই। তার কবিতায় তার ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বের বাইরের পর্যবেক্ষণ আশ্চর্যজনকভাবে মিলেমিশে থাকে। এগ্জটিক লাগে না কোনো কিছু, এমনকি যখন তিনি স্ব-শ্রেণীর সীমানা ডিঙান তখনও:
মৃত শিশুটিকে বুকে নিয়ে ভিক্ষা মাগতে মাগতে
এক দরিদ্র মা, উন্মাদিনী ছুটে গেলো শ্মশানের দিকে
শ্মশানে বৃষ্টি এলে কি
জলের প্রথম ফোঁটায় মৃত শিশুরা পাশ ফিরে জেগে ওঠে?
স্রেফ সহানুভূতিজাত বিবৃতি নয়, বা নিবিড় পর্যবেক্ষণের সততাই শুধু নয়, এসব দৃশ্যের সামনে বুক টানটান করে দাঁড়াবার সাহস সমকালীন কবিতায় খুব কম কবির-ই আছে। ফলে এরা তার কবিতায় রাজনৈতিক বিবৃতির অতিরিক্ত হয়ে দেখা দেয়। বাংলা সাহিত্যে এরকম কবিতা সার্থকভাবে লেখার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয় তা অবহিত পাঠকমাত্রই জানেন।
এমনিতেই শিশুর কবরের মতো ছোট্ট
আরো করুণ তোমার আমার সকলের মা ও মাতৃভূমি
গরিব মেয়েটার নিরীহ স্তনের মতো ভীত-সন্ত্রস্ত
সকলের প্রেম ও নির্বাক প্রকৃতি
গ্রামপুলিশের খামাখা পোশাকের মতো ব্যর্থ বোকা
এই অর্থহীন রাষ্ট্র ও রাজধানী
এরকম উচ্চকিত এবং প্ররোচনাময় কবিতায়ও কফিল আহমেদ ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের শক্তি বিস্মৃত হন না। তবে তার কবিতা সেভাবে রাগী আর "মেটালিক" হয়ে উঠেছে ১৯৯৫ সালের পর। তখন আমার সাথে কফিল ভাইয়ের যোগাযোগ আর ওভাবে নেই। ততদিনে তিনি শিল্প ও জীবনের আরো নানা অনুষঙ্গে জড়িত হয়ে গেছেন। রাজনীতি করছেন, উদ্দীপ্ত করা অনেক গান লিখছেন-গাইছেন, জেল খেটেছেন এবং কমপক্ষে একটি হার্ট-অ্যাটাক সারভাইভ করেছেন। এসব-ই আমি দূর থেকে শুনেছি।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত কফিল ভাই এবং আমি একসঙ্গে ছিলাম। তারপর আমার জীবনচাহিদা আমাকে দূরে নিয়ে গেছে। কিন্তু কফিল ভাইকে যখনি দেখি, এই দূরত্ব আমি অনুভব করি না। পাঁচ বছর পরও যখন দেখা হয়, তিনি এমনভাবে কথা বলেন যেন গতকালও কথা হয়েছে তার সাথে। ফলে আমি সর্বদা তার নিকটে থাকি। কিন্তু সেই দূরত্বে আমি নিশ্চয়ই কোনোদিন পৌঁছাব, যেখানে দাঁড়িয়ে কফিল আহমেদ-এর প্রাণহরণ কবিতামালার শক্তিকে আরো নির্মোহভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাবে।
হতে পারে, কফিল আহমেদ-এর কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতির বগলদাবা হয়েই থাকলাম। কবুল করি, এটা আমার আত্মজীবনীর খসড়াই। আত্মজীবনী যদি কোনোদিন লিখি, তাহলে এই সময়ের বৃত্তান্ত আমাকে এভাবেই লিখতে হবে। সেখানেও কারো মনে হতে পারে, নিজের কথা লিখতে গিয়ে আমি কফিল আহমেদ-এর কথাই বেশি লিখেছি। কী আর করা? এরকম নানাজনের জীবনীর অংশ নিয়েই তো আমার আত্মজীবনী। আমার কপালে এভাবেই বুলেটের মত ঢুকে আছে কত কত প্রিয় মানুষের মুখ!
* শুরুর কবিতাংশটি সুনীল সাইফুল্লাহর, বাদবাকি সব উদ্ধৃতি (গীনসবার্গের অনুবাদ ছাড়া) কফিল আহমেদ-এর কবিতা থেকে