হাসপাতালে গাদাগাদি করে করোনার চিকিৎসা চলছে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম প্রকাশিত: ০৯:১২, ৯ জুলাই ২০২১ আপডেট: ০৯:২২, ৯ জুলাই ২০২১ টাঙ্গাইলে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের বেড ছাড়াও গাদাগাদি করে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। অন্যদিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, ১০ জন ডাক্তার ও ৩৮ জন নার্স আক্রান্ত হওয়ায় ব্যহত হচ্ছে রোগীদের সেবা। সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, টাঙ্গাইলে আরো ২০ জন চিকিৎসক এবং চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাওয়া হয়েছে। আইসিসিডিডিআর এর ল্যাবে পরীক্ষায় দেখা গেছে টাঙ্গাইলের রোগীদের প্রায় শতভাগই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আক্রান্ত। এদিকে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, করোনা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগি ও রাতে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে গত জুন থেকে করোনা বাড়তে থাকে। ১২ জুন থেকে আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মাঝে ২৫ ও ২৬ জুন আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশের নিচে থাকলেও পরে তা আবার বেড়ে যায়। জুলাই মাস থেকে আক্রান্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জনের। গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার ভবনে ৫০ শয্যার এই করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়। এখন এই ওয়ার্ডটিতে করোনা সন্দেহভাজন রোগিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত রোগিদের জন্য জেনারেল হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডকে করোনা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে ৫৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়াও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ১০টি শয্যা রয়েছে। ওয়ার্ডে রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়। জেলার গ্রাম অঞ্চলে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি কাঁশির রোগি রয়েছে। করোনা পরীক্ষা করালেই অধিকাংশ রোগীর পজিটিভ আসে। এজন্য গ্রামেগঞ্জে করোনার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, করোনা ইউনিটে ৮১জন ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫৩ জন ভর্তি রয়েছেন। করোনা ওয়ার্ড ও সন্দেহ ওয়ার্ডের কোন সিট খালি নেই। অতিরিক্ত রোগীদের গাদাগাদি করে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখা গেছে। অনেক রোগীর বেডেই স্বজনরা বসে আছেন। দেলদুয়ার উপজেলার মৌলভীপাড়া গ্রাম থেকে আসা রোগি স্বজন লিপি বেগম বলেন, আমার স্বামী মামুন মিয়া (৫০) করোনায় আক্রান্ত। বুধবার (৭ জুলাই) হাসপাতালে ভর্তি করেছি। বেডের পাশের জানালার দরজা ভাঙা। রাতে মশার যন্ত্রণায় ঘুম পারতে পারিনি। টয়লেটও ব্যবহারের অনুপযোগি। একবার টয়লেটে গেলে বার বার বমি আসে। এছাড়াও উপরের ফ্যান ঘুরে না। বাহির থেকে হাত পাখা কিনে এনে বাতাস দিচ্ছি। ফারুক হোসেন নামের অপর রোগীর স্বজন বলেন, তিন দিন জ্বর থাকার পর আমার মাকে করোনা সন্দেহ ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি। দুইদিন যাবত শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। কোন বেড না পেয়ে ফ্লোরেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ঔষধ ও খাবার বাহির থেকে কিনে আনতে হয়। হাসপাতাল থেকে তেমন কিছু দেওয়া না। সুমন মিয়া নামের এক রোগী বলেন, হাসপাতালের টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগি। বেশ কিছু ফ্যানও অচল। মশারও সাংঘতিক উৎপাত। এসব সমস্যার কারণে আমার মতো অনেক রোগীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমাদের জনবলের সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবু কাওছার/টিপু আরো পড়ুন