Anandabazar
সম্পাদক সমীপেষু: পরাজিতের পুনর্বাসন
১০ জুলাই ২০২১ ০৪:৫৫
তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় আইনসভা যেমন দু’কক্ষ বিশিষ্ট— উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভা, ঠিক সেই ধাঁচে রাজ্যের আইনসভায় দু’কক্ষের সংস্থান সংবিধানে রাখা আছে। বিধান পরিষদের সদস্যসংখ্যা হবে বিধানসভার মোট সদস্যসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, এবং তাঁরা ছ’বছরের জন্য মনোনীত হবেন। এই বিধান পরিষদ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, অন্ধ্র, তেলঙ্গানা ও কর্নাটক— এই ছ’টি রাজ্যে টিকে আছে। ২০০৭ সালে অন্ধ্রে অবলুপ্ত বিধান পরিষদ পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। সে সময় প্রধান বিরোধী দল তেলুগু দেশম পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় ফিরে এলে আবার বিধান পরিষদ তুলে দেবে। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজ্যসভার গুরুত্ব অনস্বীকার্য, কিন্তু সেই গুরুত্ব বিধান পরিষদের নেই। রাজ্য মন্ত্রিসভা কেবলমাত্র বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ। অর্থবিল সংক্রান্ত আলোচনার সুযোগ বিধান পরিষদকে দেওয়া হয়নি। শাসন সংক্রান্ত প্রায় কোনও ক্ষমতা ভোগ করতে পারে না বিধান পরিষদ। বিধানসভায় পাশ-হওয়া বিল কেবলমাত্র চার মাস আটকে রাখার ক্ষমতা আছে বিধান পরিষদের। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫২-৬৯, এই পর্বে ৪৩৬টি পাঠানো বিলের মধ্যে ৪৩২টি পাশ করেছিল তৎকালীন বিধান পরিষদ।
যে সকল প্রার্থী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন, তাঁদের সাংবিধানিক পুনর্বাসন দেওয়ার জন্যই নতুন করে বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা
হচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ। এর হাতছানিতেই বুঝি নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে-যাওয়া সদস্যরা আবার ফিরে আসার জন্য আকুল হচ্ছেন!
সরিৎশেখর দাস
Advertisement
হাতি
পোষা
৬ জুলাই বিধানসভার প্রথম অধিবেশনে বিধান পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। পশ্চিমবঙ্গে এর আগেও বিধান পরিষদ ছিল। ১৯৬৯ সালে গঠিত দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের শাসনকালে ২১ মার্চ (১৯৭০) বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিলোপ হয় বিধান পরিষদের। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী সেই প্রস্তাব করেন, বিরোধী দলনেতা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় সমর্থন করেছিলেন।
বর্তমান সরকার ২০১১ সালের প্রথম অধিবেশনে ২৮ জুন বিশেষ সভায় বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব পেশ করেছিল। প্রায় সব ক’টি বিরোধী দলের তীব্র বিরোধিতায় সরকার পিছিয়ে গিয়ে সর্বদলীয় কমিটি গঠনে বাধ্য হয়। সেই বিধানসভার সদস্য থাকার সুবাদে আমিও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলাম। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এই শ্বেতহস্তী পোষা? সরকার বলছে, ঋণে রাজ্য জর্জরিত, সুদ গুনতে ঋণ করতে হচ্ছে। তা হলে আরও একটি কক্ষের সৃষ্টি কেন? বিধান পরিষদের পরিকাঠামো, সদস্যদের বেতন, ভাতা, ভ্রমণ, আবাস-আহার, চিকিৎসা, পদাধিকারীদের ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান সুযোগ, অধিবেশন কক্ষ, কর্মচারী নিয়োগ, বিবিধ খাতে কোটি কোটি টাকার সংস্থান করতে হবে।
পরিষদ গঠনের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় সমাজের বিজ্ঞ, দক্ষ মানুষদের স্থান দেওয়া, তা হলে এই বিধানসভায় তো তেমন সব মানুষই বিদ্যমান। এখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিল্পী, কবি-লেখক, গায়ক-অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক, সকলে আছেন। তা ছাড়া, বিধানসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তা পরিবর্তনের ক্ষমতা বিধান পরিষদের নেই। বিরোধিতারও অধিকারী নয়। তা হলে এর প্রয়োজন কী? এটা শুধু পিছনের দরজা দিয়ে পরাজিত প্রার্থীদের সদস্য করে আনার ব্যবস্থা। স্বজনপোষণের আর একটি ক্ষেত্র তৈরি হল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের তাঁবেদারদের তুষ্ট করতে দ্বিতীয় কক্ষ চালু করেছিল। আমরা কাদের তুষ্ট করতে চাইছি? দরিদ্র দেশে যেখানে রাজ্যপাল পদের বিলোপ ঘটানোর প্রস্তাব আসে, নতুন সংসদ ভবনের কাজ স্থগিত রাখার কথা ওঠে, সেখানে রাজ্যে দ্বিতীয় কক্ষ চালু করা বিলাসিতা নয় কি? দেশের বেশির ভাগ রাজ্যে বিধান পরিষদ নেই, তারা কি পিছিয়ে? যেখানে বিধান পরিষদ চালু আছে, বাড়তি কী সুবিধে? তার কি কোনও সমীক্ষা আছে?
সুভাষ নস্কর
প্রাক্তন সেচমন্ত্রী, ক্যানিং, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নিষ্প্রয়োজন
পশ্চিমবঙ্গে পুনরায় বিধান পরিষদ গঠনের প্রয়োজন নেই। প্রথম কারণ, রাজ্য আইনসভার প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। তার জন্য কোনও একটি প্রস্তাব বিধানসভায় গৃহীত হওয়ার পর বিধান পরিষদে সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। দুই কক্ষের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বিধান পরিষদ প্রস্তাবটিতে সম্মতি জ্ঞাপন না করে চার মাস আটকে রাখতে পারে, অথবা, সংশোধনের জন্য বিলটিকে ফেরত পাঠাতে পারে। পুনরায় যদি বিধানসভা বিধান পরিষদকে ওই প্রস্তাবটি পাঠায় সম্মতির জন্য, এবং বিধান পরিষদ যদি এক মাসের মধ্যে সম্মতি জ্ঞাপন না করে, তা হলে বিলটি উভয় কক্ষে গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বিল পাশ করানোয় বিধান পরিষদের কোনও ক্ষমতা নেই। বড় জোর বিল পাশে কিছু বিলম্ব করতে পারে।
দ্বিতীয় কারণ, বিতর্ক, প্রশ্ন, ছাঁটাই প্রস্তাব, অনাস্থা প্রস্তাব, প্রভৃতির মাধ্যমে বিধানসভাই মন্ত্রিসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিধান পরিষদের কোনও ভূমিকা নেই। ক্ষমতা ও মর্যাদা, দু’দিক থেকে বিধানসভা বিধান পরিষদের অনেক উপরে।
মনোরঞ্জন বর্মন
কোচবিহার
জন্য
উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল উইম্বলডন মিউজ়িয়াম দেখার স্মৃতি। নব্বইয়ের দশকে মিউজ়িয়ামের প্রবেশমূল্য ছিল দশ পাউন্ড, এখন তা পঁচিশ। একটা টুর্নামেন্ট ঘিরে এত বড় সংগ্রহশালা হতে পারে, ধারণার বাইরে ছিল। নানা বছরের টিকিট, ট্রফি, ব্যবহৃত র্যাকেট, প্রকাশিত স্মারক, জুতো, বল, নেট, সাফল্য বা হতাশার হাজারও ছবি, খেলোয়াড়দের মূর্তি, চমৎকার আলো এবং কোর্টের আবহ— সব মিলিয়ে পাকা শিল্পীর হাতের কোলাজ যেন। কোনও কিছুতে হাত দেওয়ার উপায় নেই। ছুঁলেই সাহেব পেয়াদা এসে হাজির— সবিনয়ে নিষেধ করবেন। চাবির রিং বা চায়ের কাপ, এমন নানা স্মারক কেনা যায়। দাম আকাশচুম্বী এবং সবই ‘মেড ইন চায়না’! সময় নিয়ে দেখেছিলাম টেনিসের ‘চশমা-পরা রানি’ বিলি জিন কিং আর ‘দুষ্টু ছেলে’ জন ম্যাকেনরোর ব্যবহৃত নানা জিনিস। ভারতীয় হিসেবে গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল ওই মিউজ়িয়ামেই আনন্দ অমৃতরাজকে সই-শিকারিদের মাঝখানে দেখে। ভ্রমণ-শেষে আকাশের নীচে খোলা রেস্তরাঁয় বসে গরম ফিশ অ্যান্ড চিপস খাওয়ার আনন্দও ছিল অপার।
অলক রায়চৌধুরী
কলকাতা-৫৫
খেলা
লকডাউন, বিধিনিষেধের মধ্যেই মন জুড়িয়ে দেওয়া এক ঝলক হাওয়া— ফুটবল প্রতিযোগিতা ইউরো কাপ। সঙ্গে দোসর, কোপা আমেরিকা। ওই খেলোয়াড়রাও তো এসেছেন পরিবার ছেড়ে, কেউ হয়তো আমাদেরই মতো প্রিয়জনকে শেষ শয্যায় দেখেছেন ক’দিন আগে, বা নিজেরাও খেয়েছেন গুচ্ছের ভিটামিন সি, জ়িঙ্ক ট্যাবলেট। কিন্তু ফিরে এসেছেন ঠিক সেই ভালবাসার জায়গায়, ফুটবল মাঠ যার নাম। দেখে মনে হয়, ফুটবলের মতোই জীবনের লড়াইটাও এ ভাবেই লড়ে জিততে হবে। ওই ‘গোওওওল’ উচ্চারণ আর আবেগটাই জীবনের ভ্যাকসিন।
গৌতম নন্দ
Advertisement