প্রকৃতিতে চলছে বর্ষা। এমনিতেই শান্ত তিতাসে এখন ঢেউয়ের নাচন। তবে জনতার নাচনে তিতাস যেন আরো উদ্বেল। তিতাসে প্রতিযোগিতা করে চলছে নৌ ভ্রমণ। সঙ্গে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো। লকডাউন যেন থোরাই কেয়ার! আর হবেই না কেন? এ পথ যে দেখিয়েছেন একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), যিনি কি-না এসব রোধে উপজেলা পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করার কথা। সেই ইউএনওই লকডাউনকে শিকেয় তুলে গেছেন নৌকা ভ্রমণে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাস নদীবেস্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন নৌ পথে ভ্রমণের হিড়িক পড়েছে। এক শ্রেণির যুবক উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে নৌকা নিয়ে ভ্রমণে বেরুচ্ছেন। জেলা সদরের পাশাপাশি, নবীনগর, সরাইল, আখাউড়া ও বিজয়নগরে এ দৃশ্য চোখে পড়ছে বেশি। অবশ্য নবীনগরে নৌ ভ্রমণ করতে গিয়ে কয়েক যুবককে জরিমানা গুণতে হয়েছে। আখাউড়াতে এ ধরনের ভ্রমণ লক্ষ্য না করা গেলেও শুক্রবার বিকেলে ইউএনও ও এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরিবার নিয়ে নৌ ভ্রমণে বের হন, যা এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পূর্বাংশের তিতাস নদী ও দক্ষিণাংশের কাউতলি কুরুলিয়া খালের অংশে ঈদ পরবর্তী সময়ে ‘ডিজে পার্টির’ তৎপরতা বেড়েছে। জেলার নবীনগর উপজেলার তিতাস নদীর রসুলপুর এলাকা, একই নদীর বিজয়নগর উপজেলার রামপুর, মনিপুর, দত্তখোলা ও পত্তন, সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর, ইসলামাবাদ ও আখাউড়া উপজেলার খড়মপুর, শ্যামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় এ তৎপরতা লক্ষণীয়। মেড্ডার এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঈদ পরবর্তী সময়ে নদীর মধ্যে উঠতি বয়সের তরুণদের ডিজে পার্টির তৎপরতা বেড়েছে। নৌ পথে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা না থাকায় উঠতি বয়সের তরুণেরা সরকার ঘোষিত লকডাউনকে কর্ণপাত করছে না। তিতাস পাড়ের কাশিনগর এলাকার বাসিন্দা নির্মল দাস জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা নিয়ে গান বাজিয়ে তরুণদের লাফালাফি আর বিকট শব্দে পাড়ের লোকজন অতিষ্ঠ। তাদেরকে রোধ করা খুবই জরুরি। অন্যথায় করোনা সংক্রমণ এ থেকে বাড়ার সম্ভাবনা আছে। অবশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, নৌ পথে ডিজে পার্টির অপতৎপরতা রোধ করতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অভিযান জোরদার করা করা হয়েছে। কাউকেই স্বাস্থ্য বিধি অমান্যকরে এমন ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না। ইউএনও’র নৌ ভ্রমণ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরের পর আখাউড়ার ইউএনও রুমানা আক্তারসহ পরিবারের লোকজন সরকারি গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকারে করে উপজেলার আজমপুরের খেয়াঘাট এলাকায় যান। সেখানে যোগ দেন উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভুঁইয়া স্বপনের পরিবারের লোকজন। ওই দুই পরিবারের সদস্যরা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী নৌকায় ভ্রমণ করেন। নৌকার একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, শিশুসহ অন্তত ১৫ জন এর ছাউনিতে বসে আছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে গল্পে মশগুল। একজন নৌকা থেকেই পানিসহ সবার বসে থাকার দৃশ্য ধারণ করছেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধারণ করেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে নৌকায় উঠার সময় ইউএনও’র সরকারি গাড়িসহ দু’টি গাড়ি সড়কে রাখা হয়। এতে করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আজমপুরের কাজী জাহিদুল ইসলাম শরীফ নামে এক যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারছিলেন না বলে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এমনকি ইউএনও’র পুলিশ কর্মকর্তা ভাইও এ সময় রূঢ় আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান ভুঁইয়া স্বপন শনিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার খেয়া ঘাটে ইরিগেশন প্রকল্প দেখতে এসেছিলেন ইউএনও। পরে এখানে একটি বিনোদন স্পট করা যায় কি-না সেটি দেখানোর জন্য ইউএনওকে নিয়ে যাওয়া যায়। পরে অনতিদূরেই থাকা বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যানের একটি মাছের প্রজেক্ট দেখতে নৌকায় উঠা হয়। আমি বলেছিলাম যে ওই প্রজেক্ট দেখে এলে আমাদের এখানেও একটি প্রজেক্ট করা যাবে।’ তাহলে পরিবারের লোকজন কেন এতে ছিলো- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে গিয়ে ফোনে কথা বুঝা যাচ্ছে না বলে সরাসরি কথা বলবেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, ইউএনও’র গাড়ি রাস্তায় রাখার কারণে এক যুবক এসে ধমক শুরু করে। ওই যুবক ভাতিজা হওয়ায় তাকে দু’চার কথা বলে সরিয়ে দেন। শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তারকে সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘জাইকার একটা প্রজেক্ট দেখতে আমি সেখানে যাই। যেহেতু আমার পরিবারের লোকজন ঈদ উপলক্ষে আমার এখানে ছিলেন সেহেতু তাদেরকে নিয়ে গেছি।’ আপনি তো মানুষকে ঘরে রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন অথচ আপনি পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘুরতে গেলে মানুষ বিব্রত বা বিভ্রান্ত হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি বিব্রত বা বিভ্রান্ত না হলেই হলো। আমার কি ব্যক্তিগত জীবন নাই। আমি আমার ছেলে মেয়েদেরকে সময় দিতে পারছিলাম না, তাই গেছি।’ আপনারা কি আমাকে চাকরি করতে দেবেন না, আপনার কাছে এমন কি ভিডিও ক্লিপ আছে- এমন কথা বলে তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ প্রতিবেদকের প্রশ্নে। সাতদিনের সেরা