মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরগুলোতে দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগও। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য (প্রথম পর্যায়ে) ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। ৫০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ১৬টি পরিবার উঠেছে। পানি আর বিদ্যুৎ না থাকায় বাকি ৩৪টি পরিবার ঘরগুলোতে এখনো ওঠেনি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিগগিরই ঘরগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বড়লেখা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ১০টি, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ১৬টি, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৩টি, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৩টি এবং দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৬টি পরিবার ঘরে উঠেছে। পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় বাকি ৩৪ পরিবার ঘলগুলোতে এখনো ওঠেনি। সরেজমিনে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুই পাশে উঁচু উঁচু টিলা। মাঝখানে নিচু জমিতে (প্রথম পর্যায়ে) দশটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এর পাশেই আরো (দ্বিতীয় পর্যায়ে) দশটি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। সম্প্রতি এখানে একটি ঘর পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছেন রফিক উদ্দিন। আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর দিয়েছেন। এ জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু ঘরে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কষ্ট করে অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে। খুব কষ্টে আছি। বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি। রফিক উদ্দিনের মতো এখানে ঘর পেয়েছেন মাতাব উদ্দিনও। তিনি ঘরে স্ত্রী নিয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, দশটি ঘরের মধ্যে তিনটি ঘরে আমরা তিন পরিবার উঠেছি। কিন্তু ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। এখানে খাবারের পানির ব্যবস্থা (উৎস) নেই। আমাদের এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। পানি আর বিদ্যুৎ না থাকায় বাকি পরিবারগুলো এখনো ঘরে ওঠেনি। আমরা বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু পাইনি। উপজেলার কাশেমনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় মনি বেগম, ফাতির আলী, সুলতানা বেগম, আব্দুল বারেক, নাজমা বেগম, আজমল আলী ও সাদ উদ্দিনের সঙ্গে। তারা বলেন, এখানে ১৫টি ঘর আছে। এর মধ্যে আমরা সাত পরিবার উঠেছি। বাকি পরিবারগুলোও ওঠেনি। কারণ এখানে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। আমরা পানি অন্যদের বাড়ি থেকে কষ্ট করে এনে পান করছি। পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের ভোগান্তি কমবে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ৫০ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ইউএনও’র কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের ঘরগুলোতে ওয়্যারিং কাজ করানোর কথা। কিন্তু ওয়্যারিং কাজ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি। তবে বুধবার (৭ জুলাই) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আমাদের কাছে পত্র এসেছে। ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ নিজ খরছে ওয়্যারিংসহ যাবতীয় কাজ করে দেবে। যেসব ঘর মেইন লাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আছে, সেগুলোতে দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এর বাইরে ঘরগুলোতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে পানির উৎস (গভীর নলকূপ) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভোগা-চাঁনপুরে নির্মিত ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলছে। মূলত বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নলকূপ স্থাপন কার্যক্রমে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নলকূপ স্থাপন করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর প্রথম মাসিক সমন্বয়সভায় ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ডিজিএমকে চিঠিও দিয়েছি। ডিজিএম জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হবে। ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। তা সফলভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই রকম আরো খবর