ভয়ে পালাল &#

ভয়ে পালাল আত্মীয়-প্রতিবেশীরা, শ্যামল দাশের দেহ সৎকারে | 1050153 | কালের কণ্ঠ


শ্যামল দাশ। বয়স পঞ্চান্ন বছর ছুঁই ছুঁই। পেশায় গৃহশিক্ষক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন শনিবার (০৩ জুলাই) মধ্যরাতে। স্ত্রী শিপ্রা রানী দাশের বুকফাটা কান্নায় গোটা এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। কিন্তু তাতেও মন গলেনি আত্মীয়-স্বজনদের। আর প্রতিবেশীরা করোনার ভয়ে এলাকা থেকেই পালিয়ে গেছেন। প্রায় ৮ ঘন্টা স্বামীর মৃতদেহ আকড়ে পড়েছিলেন শিপ্রা।
রবিবার (০৪ জুলাই) সকালে সেই খবর পৌছে গেল মেহেদী শিকদারের কাছে। করোনার ভয় উপেক্ষা করে তিনি হাজির হন মৃতের বাড়িতে। ঘরে গিয়ে দেহ তুলে খাটিয়ায় করে নিয়ে গেলেন শ্মশানে। এভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা এসে শ্যামলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন।
সম্প্রীতির এই দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছে সাগরতীরের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা পৌরসভার হার্ডওয়ার পট্রিতে। ধর্মীয় হানাহানির খবরই যখন শিরোনামে উঠে আসে, সেই সময় যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়লেন পাথরঘাটার পৌর এলাকার মানুষেরা। তিন ভিন্নধর্মী মানুষের কাঁধেই শেষ যাত্রায় যান শ্যামল দাশ। শ্মশানেও কাঠ জোগাড় করা থেকে শুরু করে দাহ করার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শ্যামলের পাশে ছিলেন মেহেদী, নুর আলম, রাসেলরা। মেহেদী শিকদার এর আগেও করোনায় আক্তান্ত হয়ে মারা যাওয়া দুজনের লাশ দাফন করেছেন। তাদের একজন ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী। অপরজন হাসপাতাল রোডের নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী।
স্বামীর দেহ সৎকারের পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় শিপ্রা রানী এবং তার একমাত্র সন্তান শ্রীতমা দাশের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। শিপ্রা রানীর করোনা পজেটিভ এবং তার মেয়ের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তারা দুজন হার্ডওয়ের পট্রির বাসায় অবস্থান করছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস  দেয়া হয়েছে।
শিপ্রা রানী সাংবাদিকদের জানান, স্বামী-সন্তান নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় থাকতেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা সকলেই বাইরে থাকেন। মূলত পাড়ায় পাড়ায় শিশুদেরকে পড়িয়ে শ্যামল দাশ সংসার চালাতেন। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তিনদিন আগে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার স্যাম্পল দিয়ে আসেন। ওই দিন হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি করোনা পজিটিভ। সেই থেকেই শ্যামল ঘরের মেঝেতে থেকেছেন।
শিপ্রা রানী আরো বলেন, কয়েকদিন ধরে আমি জ্ব‌রে ভুগছিলাম। শনিবার জ্ব‌রের সঙ্গে আমারও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। স্বামীর ঠিক মতো যত্ম নিতে পারছিলাম না। শনিবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। রাত আনুমানিক ২টার দিকে তিনি দেহ ত্যাগ করেন। তখন আমি আরো ভয়ে কুকড়ে যাই। কাছের আত্মীয় স্বজনদের খবর দিয়েছি। প্রতিবেশীদের সহযাগিতা চেয়েছি। কিন্তু কেউই আমার পাশে দাঁড়ায়নি। মৃতদেহ নিয়ে প্রায় ৮ ঘন্টা আমি ঘরের মধ্যে ছিলাম।
রবিবার সকাল পৌনে ১০টা দিকে মেহেদী শিকদার নারে এক যুবক প্রথম ঘরে ঢোকেন। তার সঙ্গে আরো তিনজন ছিল। তারা ঘর থেকে দেহ নামিয়ে শ্মশানে নিয়ে যায়। তারপর কী হয়েছে আমি কিছুই জানি না। বেলা ১১ টার দিকে মেহেদী আবার এসে আমাদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। সঙ্গে প্রশাসনের গাড়ি ছিল। তবে আমরা মা-মেয়ে রিকশাযোগে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়েছি। শুনেছি, আমি নাকি করোনায় আক্রান্ত। আমি যদি না ফেরার দেশে পাড়ি জমাই তবে আমার পাশেও স্বজন কিংবা প্রতিবেশীরা দাঁড়াবেন না, এটা ভাবতেই পারছি না।
স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সামাজিক সংগঠন ‘প্রত্যয়’র সভাপতি মেহেদী শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় এক যুবক মুঠোফোনে বিষয়টি আমাকে সকালে জানিয়েছেন। আমি সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌছে দেখি ঘরের মেঝেতে শ্যামলের লাশ। লাশের পাশেই ছিলেন স্ত্রী। ঘরের মধ্যে তো দুরে কথা প্রতিবেশীদের কেউ তাদের ঘরেই আশেপাশে আসেননি। শ্যামলের করোনায় মৃত্যুর খবর জেনে প্রতিবেশী পুরুষরা আগেভাগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। হার্ডওয়ের ব্যবসায়ী নূর আলম, কিশোর রাসেলকে নিয়ে আমি ঘরে প্রবেশ করি। তিনজনে চেষ্টা করেও লাশ বাইরে নিয়ে আসতে পারছিলাম না।
পরে পৌরসভার মর্কেটের দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে শিপন কর্মকারের সঙ্গে দেখা হয়। শিপনকে অনেক অনুরোধ করে শ্যামলের বাসায় নিয়ে আসি। পরে আমরা চারজনে লাশ ঘর থেকে নামিয়ে বাইরে নিয়ে আসি। দেহ তুলে খাটিয়ায় করে ভ্যানযোগে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরের শ্মশানে আমরাই নিয়ে যাই। এমনকি শ্যামলের দেহ খাটিয়ায় করে আমারই চিতায় তুলে দেই। তারপর শ্মশানের পুরোহিত হিন্দু রীতি অনুযায়ী শ্যামলের দেহ সৎকার করেন। এই দীর্ঘ সময়ে শ্যামলের প্রতিবেশী কিংবা স্বজনদের দেখা পাইনি। এমনকি অপর কেউ এগিয়েও আসেননি।
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Patharghata , Bangladesh General , Bangladesh , Mehdi Sikder , Shipra Queen Das , Noor Alam , Shipra Queen , Patharghata Upazila Health Complex , , Green Das , Shall Patharghata , Wood Raised , Hospital Road Shoes Islam , Her Meyer , Mehdi Sikder Give , President Mehdi Sikder , பதர்கட்டா , பங்களாதேஷ் , நூர் ஆலம் ,

© 2025 Vimarsana