তাবারুল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক,
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 29 Jul 2021 11:38 AM BdST
Updated: 29 Jul 2021 11:38 AM BdST
ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের কাছে খাল পার হয়ে বনে ঢুকছে একটি বাঘ। ছবিটি ৯ জুলাই দুপুরে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
জ্যৈষ্ঠের গরম থেকে স্বস্তি পেতে পানিতে নেমেছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বাঘ। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন
সেন্ট পিটার্সবুর্গ সম্মেলনের লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি হয়নি কিছুই; বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা স্থিতিশীল থাকাই ‘বড় সুখবর’।
");
}
বন কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘের সংখ্যা সেভাবে বাড়ানো না গেলেও পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় বন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও তৎপরতা ‘আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি’। স্থানীয়দের নিয়ে বিভিন্ন কমিটি করে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন তারা।
প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার অংশ বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় পড়েছে; বাকিটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়।
এই বিচিত্র প্রাণ সম্ভারের বড় স্বাতন্ত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার। একক জায়গা হিসেবে সুন্দরবনেই এক সময় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বাঘ ছিল।
২০০৪ সালে বন বিভাগের জরিপে পায়ের ‘ছাপ’ গণনা করে বলা হয়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০। এরপর ক্যামেরা ট্র্যাপিংয় পদ্ধতিতে ২০১৫ সালে করা শুমারিতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নেমে আসে ১০৬টিতে। ২০১৮ সালের শুমারিতে তা বেড়ে ১১৪টি হয়।
এর মধ্যেই বাঘ রয়েছে এমন ১৩টি দেশের নেতারা ২০১০ সালে মিলিত হয়েছিলেন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ শহরে। ১২ বছরের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার এসেছিল সেই সম্মেলন থেকে।
সেই সময় শেষ হতে হাতে আছে আর এক বছর। অর্জনের ঘর একপ্রকার খালি রেখেই বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস’ পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সরকারিভাবে এবারের বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘বাঘ বাঁচায় সুন্দরবন, সুন্দরবন বাঁচায় লক্ষ জীবন’।
তো সেই বাঘের জন্য সুন্দরবনকে কতটুকু নিরাপদ করতে পেরেছে বাংলাদেশ?
সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের কাছে খাল পার হয়ে বনে ঢুকছে একটি বাঘ। ছবিটি ৯ জুলাই দুপুরে তোলা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, আগে বাঘ লোকালয়ে এলে শত শত মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ত মেরে ফেলার জন্য। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
"বাঘ সুরক্ষায় বিভিন্ন কমিটি ও গ্রুপ কাজ করছে। কোনো বাঘ লোকালয়ে এলে মানুষ আর মেরে ফেলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। তারা বনকর্মীদের প্রতি আস্থা রেখে খবর দিচ্ছে, বাঘকে বনের ভেতরে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।"
অধ্যাপক আনোয়ারুল বলেন, সর্বশেষ জরিপে বৈজ্ঞানিক কোনো কৌশল অবলম্বন করে বাঘের সংখ্যা দেখা হয়নি। তারপরও দেখা গেছে সংখ্যার দিক থেকে আটটি বাঘ বেড়েছে।
“এই কয়েক বছরে বাঘের সংখ্যা স্থিতিশীল আছে ধরে নিলেও তা আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর।"
‘যা হয়নি’, তার বদলে ‘যা হতে পারে’- সেই সম্ভাবনার দিকে নজর দিতে চান ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী।
তার ভাষায়, "হরিণ সারা সুন্দরবনে আছে, বাঘও সারা সুন্দরবনে বিচরণ করে। বাঘ বৃদ্ধির জন্য এটাই এখন সম্ভাবনার জায়গা।"
বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে ‘বিপদাপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে বুনো পরিবেশে টিকে থাকা বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩৮৯০টি। এর মধ্যে সুন্দরবনের দুই অংশ মিলিয়ে বেঙ্গল টাইগার আছে দুইশর কিছু বেশি।
গত কয়েক বছরে লোকালয়ে চলে আসা বাঘের মৃত্যু কমলেও চোরাশিকারির উৎপাত থেমে নেই। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন সংশোধন করে সরকার বাঘ হত্যায় শাস্তি ও অর্থদণ্ড বাড়িয়েছে, কিন্তু গত জানুয়ারি মাসেও সুন্দরবন থেকে শিকার করা একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়াসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও বনবিভাগ।
পিটার্সবুর্গ সম্মেলনের অঙ্গীকার পূরণে অন্য দেশগুলো কী করছে?
নেচার কনজারভেশন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক উপ-প্রধান বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেই সম্মেলনে অংশ নেওয়া ভারত, রাশিয়া, নেপাল ও ভুটান লক্ষ্য পূরণে আংশিকভাবে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালের জরিপে এ চারটি দেশেই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় কমেছে।