আমার মত আবুগাবু মানুষেরা যখন চিন্তা করে কিছু বলতে যায় তখন দুইটা ব্যাপার হয়,
১। চিন্তা করতে পারার আনন্দ ও উত্তেজনায় যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে সেটার কথা বেমালুম হাওয়া হয়ে যায় স্মৃতি থেকে,
২। অথবা কোনও জাদুর বলে তা যদি মনেও থাকে তাহলেও অনেক সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জড়ো করতে করতে পুলসিরাত যখন পার হবার সময় আসে তখন সে উলটা দিকে দৌড় দেয়...
আমি অবশ্য সনদপ্রাপ্ত সেসব আবুগাবুর থেকে একটু আলাদা [ নিজের স্বকীয়তা বলে একটা ব্যাপার আছে না? :|] আমি কিছু ভুলিওনা বা গুলিয়েও ফেলিনা বরং বদমায়েশী করে ঘন থাই স্যুপ খাওয়ানোর বদলে পাতলা থাই স্যুপ খাওয়াই [ তাও থাই স্যুপের জায়গায় টমেটো জুসতো খাওয়াইনা, তাইনা? { আসলে সেরকম ক্ষিদা লাগছে...
তাই আমার প্রিইয় প্রিইয় খাবাআআআর এর চেহারা ছাড়া মনে কিছুই আসতেছেনা... ( আহ! চকোলেট, আইস্ক্রীম, কেক, ফ্রায়েড রাইসের সাথে চিলি চিকেন...
, ধুরো, ডায়েটিং এর মাথায় জুতার বাড়ি!)}]
যাইহোক, আমি এই কথাটাই আসলে একটু ভাব নিয়ে বলার চেষ্টা করলাম যে আমার ব্লগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু যদি খুঁজতে আসেন তাহলে সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বেই আশা ভাল, কঠিন আব্জাবের ধাক্কায় দিক ভুল হলে সেটা মোটেও আমার দায়িত্ব না। আর অবশ্যই নিজের মোবাইল ও আইপড জাতীয় জিনিসপত্র সাবধানে রাখবেন, যেন ছুড়েটুড়ে মারতে না পারেন!
আগডুমবাগডুম আবজাবের শুরু...
আমি লাফালাফি ধরনের মানুষ, সবার তাইই ধারণা। আমার নিজেরও তাইই ধারণা ছিল এককালে। এককালে আমি ভাবতাম আমি আমার ভালবাসা আর কৌতুক দিয়ে সবাইকে জয় করতে পারব, সব সমস্যার সমাধান করতে পারব। তখনও বুঝিনি বা বুঝতে চাইনি যে মানুষ আসলে আমার থেকে কৌতুক আর হাসি-তামাশার অঙ্গশটুকু বেছে নিয়ে আমার ভালবাসা টুকু মিষ্টির ভিতরে লুকিয়ে দেয়া দরকারী কিন্তু অনাকর্ষণীয় ঔষুধের মতই ফেলে দিচ্ছে। তার ফলে আস্তে ধীরে আমি বা আমার পুরো প্যাকেজটা পরিণত হয়েছি একটা ভাড়ামোতে।
যখন কারও কিছু একটা দরকার হয়, কান্নাকাটি করার জন্য শক্ত একটা কাঁধ, মন খারাপ ভাব দূর করার জন্য একটা হাস্যকর খেলনা, স্বান্তনার জন্য বিশ্বস্ত বন্ধু তখন খোঁজ পড়ে আমার। তার আগ পর্যন্ত কারও আমার কথা মনে পড়েনা! যখন কারও ভাঙ্গা মনটা কে আমি অনেক ভালবাসায় জোড়া লাগাই তখনকার ভালোলাগাটুকু, কারও মুখে হাসি ফোটানোর সাফল্যটুকু অনেক আনন্দের, তা জানি। কিন্তু এইই কি সব? আমার কি শুধু তার দুঃখেরই সাথী হতে হবে? সুখের সময়ে আমার কোনও পাত্তা নাই? মানুষের দুঃসময়ের বন্ধুই নাকি প্রকৃত বন্ধু, তাহলে দুঃসময় শেষে প্রকৃত বন্ধুটার কি করা উচিত? তার কি এই ভেবে দুঃখের সাথে জাবড় কাটা উচিত যে 'আহারে! মানুষের দুঃখটা আরেকটু বেশি স্থায়ী হলে ভালই হত, তাহলে আমি এখন একজন সঙ্গী পেতাম!'
আমি ধীরে ধীরে ছায়া মানবী হয়ে যাচ্ছি... আমার পরিচিত বান্ধবদের মন যখন অন্ধকারে আসে, মনের ইঞ্জিন যখন বিগড়ায় তখন আমি বেকুব সেটাকে ঠেলে ঠুলে আলোতে নিয়ে আসি, চাকা পাল্টাই, পালিশ দেই, ফ্যান বেল্ট বদলে দেই। তারপরে সুস্থ্য গাড়িটা সেইযে পড়িমড়ি করে ছুট দেয়, আরেকবার দুঃখ পাবার আগ পর্যন্ত তার আমারে খেয়ালই থাকেনা...:| তাহলে কি আমার কাজ হবে আড়ালে থেকে মানুষের মনের অন্ধকার দূর করা পর্যন্তই? এর পরে কি আমাকে কারও মনে রাখার দরকারটুকুও নাই?
আসলে এসব ভাবার কোনও কারন থাকত না আমার যদিনা হঠাৎ করে নিজেকে খুব একা লাগত... গত কয়েকদিন ধরে অনিদ্রা তার আঁচলে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। সত্যিকার অর্থেই গত তিনরাত আমি ঘুমাইনি। অনেক কাজ জমে আছে। সেগুলোও করা হচ্ছেনা। পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে, বই পত্রে ধুলা ঝাড়া দরকার। তাও করছিনা... কি যে করছি আসলে তাও জানিনা। চ্যাট? না তাও না... আজকাল আমি অদৃশ্য মানবী - ফুলটাইম। সিনেমাও দেখছিনা, বইও পড়ছিনা। আসমানের তারাও তো গুনতে পারিনা বৃষ্টির জ্বালায়... :|
যাই হোক। গতকালটা একটু ভাল গিয়েছিল। আমার পার্টনারের এক বান্ধবীর আজ বিয়ে। তাকে মেহেন্দি দিতে গিয়েছিলাম সেইইইইইইইইইইইইইইইইইই উত্তরা... প্রচুর আড্ডা বাজী, খাওয়া দাওয়া আর চরম ফাজলামী হল। মেহেন্দিটা খুব সুন্দর হয়েছিল। নিজে দিয়েছি বলে বলছিনা, আপুকে আসলেও ভাল লাগছিল। ফেরার পথে দুবার সিএনজি নষ্ট হল, ধানমন্ডি এসে Roche থেকে পুতুলের নানীর জন্য injection কেনা হল। তারপরে আমরা তিনজনে গেলাম স্টার কাবাবে। মোগলাই আর চা খেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিক্সায় বাসায়। রিক্সা ভ্রমনটা চরম ছিল। অনেকদিন বাদে রিক্সা নিয়ে বৃষ্টিতে ঘুরলাম! যত গান জানতাম বৃষ্টির সব গেয়ে তারপরে বাসায় ফিরেছি। আর ফিরেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। সারাদিনে কত্ত মজা করলাম, সেগুলো কাউকে শুনাতে খুব ইচ্ছা করছিল, কিন্তু শুনাব কাকে?
আমাদের বিশাল সরকারী বাসায় থাকি মাত্র আমরা চারটা প্রাণী। আম্মু তার রুমে টিভিতে আল্লাহ মালুম কি যেন দেখে, বাবা ড্রয়িং রুমের টিভিতে বা ল্যাপটপে কাজে ব্যস্ত। ভাই তার রুমে পিসিতে প্রিন্স অফ পারশিয়া/এইজ অফ দ্যা এম্পায়ার/কমান্ডোজ নিয়ে ব্যস্ত। বাকি থাকি আমি। L আকারের বাসার একটা কোনে বারান্দা আর বাথ্রুম সহ আমার রুমটার মাঝেই আমার দিন কাটে। কারও সাথেই কথা বলা হয়না রাতের খাবার সময় ছাড়া। আলাদা আলাদা রুমে ছোট ছোট দ্বীপের মত আমরা থাকি। নানাভাই বেঁচে ছিলেন যখন তখন আমি নানা ভাইয়ার সাথে দেশ ও জাতি নিয়ে নানা জ্ঞ্যানগর্ভ আলোচনা করতাম। এখন আমি আর আমার পিসি। দুজনে দুজনার, এই নীতিতেই আছি!
আমি বদলে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে না, বরং খুব তাড়াতাড়ি... এই বদলটা আমার নিজেরই ভাল লাগছে না। আগে এত কথা বলতাম, এখন কথা বলতেই ভাল লাগেনা। ভদ্রতাবোধটাও কমে গেছে এক্কেবারে। কাউকে ভাল না লাগলে তার সাথে কথাও বলিনা। প্রতিদিন রাতে নোট প্যাডে সারাদিনে কি করলাম তা লেখি তারপরে shift+delete দিয়ে অন্য কিছু করি। গতকাল ভাবলাম কিছু কেনাকাটা করলে বোধহয় ভাল লাগবে। কেনাকাটার পরে মেজাজ চরম খারাপ হল, কারন শেষমেষ আমাকে পুরা ধানমন্ডি ২৭ হেটে পার হয়ে বাসায় ফিরতে হল। এরকম বেকুব আমি আগে ছিলাম না... আমি আমার গেইমটাকে [জীবন] রিলোড করতে চাই, ধ্যাত্তেরিকা!
--দুষ্ট বালিকা