৫ বছরে শুরুই হয়নি জাহাজ বাড়ির জঙ্গি আস্তানার মামলার বিচার
মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম
প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৬ জুলাই ২০২১
আপডেট: ১৩:২৯, ২৬ জুলাই ২০২১
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন আদালত।
এ ঘটনার মাত্র ২৫ দিন পর ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এতে ৯ জঙ্গি মারা যায়। কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির বিচার এখনো শুরু হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে চার্জগঠন করে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। মামলাটি অধিকতর চার্জশুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুযারি মামলাটির চার্জশুনানি শেষে ২৩ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আদালত। এরপর তা পিছিয়ে ২৩ এপ্রিল ধার্য করেন আদালত। কিন্তু এরই মাঝে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা আর শেষ হয়নি। এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আদালত আবার মামলাটি অধিকতর চার্জশুনানির জন্য ধার্য করেন। সর্বশেষ গত ৯ জুন মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। এরই মাঝে করোনার কারণে আবারও আদালত বন্ধ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির জানান, ‘মামলাটির তদন্তে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলায় কোনো আসামি পলাতক থাকলে বিচার শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। এ মামলায়ও এক আসামি পলাতক রয়েছে। এজন্য সময় লেগেছে। এরপর আমরা চার্জশুনানি শুরু করি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবরোধে অনেকটা সময় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এজন্য কার্যক্রম তেমন আগায়নি।’
তিনি জানান, ‘হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলা, ব্লগার অভিজিৎ, প্রকাশক দীপন হত্যা এসব আলোচিত মামলার বিচার আমরা শেষ করেছি। এ মামলায় চার্জগঠন হয়ে গেলে সাক্ষীদের হাজির করে মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করবো।’
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী সুব্রত দেবনাথ রানা জানান, ‘আমরা মামলায় চার্জশুনানি করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় আদালত আবার মামলাটি অধিকতর চার্জশুনানির জন্য রাখেন। মামলায় কিছু গ্যাপ আছে। শুনানিতে আমরা তা তুলে ধরবো। এরপর যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে যায় তাহলে ট্রায়ালে গিয়ে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনীভাবে লড়াই করে যাবো।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ এর পঞ্চম তলায় ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোরে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৯ সন্দেহভাজন জঙ্গি মারা যায়। হাসান নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। পালিয়ে যায় একজন। তারা সবাই জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।
ওই ঘটনায় ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
গত বছর ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- রাকিকুল হাসান রিগ্যান (২১), সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট (২৮), মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩) ও হাদিসুর রহমান সাগর (৪০)। আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক রয়েছেন। আব্দুর রউফ ও আবুল কাশেম জামিনে আছেন। অপর সাত আসামি কারাগারে আছেন।
ঢাকা/টিপু
আরো পড়ুন