comparemela.com


Anandabazar
অধিকারের সীমা
০২ জুলাই ২০২১ ০৬:১৪
ফাইল চিত্র।
অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে আইনবিধির শাসন নাই। আশ্চর্য কী! যে রাজ্যে উচ্চতম সাংবিধানিক পদাধিকারী নিজেই বিধিবিধানের ধার ধারেন না, সংবিধান অমান্য করিয়া চলেন, সেখানে সামান্য নাগরিক যে শাসন বা অনুশাসন মানিবেন না, ইহাই কি দুর্ভাগ্যজনক ‘স্বাভাবিক’ নহে? রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এই লইয়া কত বার তাঁহার সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম করিলেন— হিসাব আছে কি? অতি সম্প্রতি তিনি রাজ্য সরকারের প্রস্তুত ভাষণ পড়িতে অস্বীকার করিয়াছেন। ভাষণের কিছু অংশ তিনি পরিবর্তিত করিতে চাহেন। অথচ, পদানুসারে তিনি তাহা করিতে পারেন না। রাজ্যপাল যে হেতু স্বাধীন ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রাদেশিক স্তরে নেহাত আলঙ্কারিক শীর্ষ— মৌর্য বা গুপ্ত আমলের প্রদেশাধিপতি কিংবা মোগল আমলের সুবেদারদের মতো তাঁহার নিজস্ব ক্ষমতা নাই— তিনি সরকারের ভাষণ পড়িবেন, সরকারের কাজে বাধা হইয়া দাঁড়াইবেন না, ইহাই কাম্য। অবশ্য ইহাকে অদৃষ্টপূর্ব বলা চলে না। ওয়াকিবহাল রাজ্যবাসীর স্মরণে আসিবে, অনুরূপ ঘটনা আগেও এই রাজ্যে ঘটিয়াছিল। তিপ্পান্ন বৎসর আগে যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষের সরকারের তৈরি করিয়া দেওয়া ভাষণটির পুরোটা রাজ্যপাল ধর্মবীর পড়িতে রাজি হন নাই, একটি অনুচ্ছেদ বাদ দিয়া পড়িয়াছিলেন। ফলে তাঁহার বিরুদ্ধে ‘বাংলা ছাড়ুন’ ধ্বনিতে মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল কলিকাতার সমগ্র রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। প্রসঙ্গত, ধর্মবীর কিন্তু ভাষণ পাল্টাইতে চাহেন নাই, বক্তৃতার একাংশ ঊহ্য রাখিয়াছিলেন কেবল। সেই কাজও অসাংবিধানিক ছিল। তবে অর্ধশতক পরে ধনখড় পূর্বসূরির দৃষ্টান্তটিও অতিক্রম করিয়া গেলেন।
কেবল ভাষণ নহে, সর্ব কাজেই রাজ্যপালের এই সক্রিয় মতামত, রাজনৈতিক অবস্থান আপাতত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপুল শিরঃপীড়ার কারণ। বুঝিতে অসুবিধা নাই, এহেন শিরঃপীড়া ঘটানোই প্রকৃত উদ্দেশ্য। কেননা, সাধারণ রাজনীতি-বোধ বলিয়া দেয়, ইহা কোনও এক ব্যক্তি-মানুষকে লইয়া সঙ্কট নহে। ইহার মধ্যে আছে রাজ্যপালের পদটিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করিবার তৎপরতা। রাজ্যস্তরের এই আলঙ্কারিক প্রধান যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি-সম, স্বাধীন ভারতে এই পদটিকে লইয়া কম বার গোলযোগ বা বিতর্ক বাধে নাই, কম বার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠে নাই। কিন্তু তবুও— ২০১৪ সালের পর হইতে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়াছে, উত্তরাখণ্ড হইতে কেরল, বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যপালের রাজনৈতিক প্রকল্প স্পষ্টই ধরা পড়িয়াছে। দ্রষ্টব্য: কেরলে কিছু দিন আগেই সিএএ প্রসঙ্গে রাজ্যপালের সহিত মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের প্রকাশ্য সংঘাত। কেন্দ্রে মোদী সরকারের ক্ষমতায় আসিবার সহিত এই ঘটনারেখার সংযোগ অবশ্যই আপতিক কিংবা আকস্মিক নহে। গত সাত বৎসরের সামগ্রিক রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ প্রকল্পেরই প্রতিফলন ইহাতে।
সংবিধান এ বিষয়ে ঠিক কী বলিতেছে? প্রথমত, রাজ্যপাল কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নহেন, তাই রাজ্য প্রশাসনের নিকট তিনি ‘আউটসাইডার’ বা বৃত্তবহির্ভূত ব্যক্তি। তাঁহার মতামত বা অবস্থান রাজ্যবাসীর কোনও অংশের মতামত বা অবস্থান প্রতিফলিত করে না। তিনি তথ্য চাহিতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন, ওইটুকুই। অম্বেডকরের ভাষায়, “সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত লইতে পারেন না।” দ্বিতীয়ত, বাবাসাহেবের ভাষায়, “যে কোনও সরকারকে ঠিক ভাবে কাজ করিতে হইলে রাজ্যপালকে তাঁহার সীমারেখা মানিয়া নিজের ভূমিকা পালন করিতে হইবে।” তবে কিনা, সরকারকে কাজ করিতে বাধাদানই আসল উদ্দেশ্য হইলে কী ঘটিবে, সংবিধান-পিতারা তাহা বলিয়া যান নাই।
Advertisement

Related Keywords

India ,Kerala , ,West Bengal ,Independent India State ,United Front ,Independent India ,Political Project ,Constitution Price ,இந்தியா ,கேரள ,மேற்கு பெங்கல் ,ஒன்றுபட்டது முன் ,சுயாதீனமான இந்தியா ,பொலிடிகல் ப்ராஜெக்ட் ,

© 2025 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.