Anandabazar
Linking aadhar card with ration card will save huge money for state govt
Aadhar Link: রেশন: আধার-যোগে বাঁচবে টাকা, তবু দেরির প্রশ্নে রাজ্য
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা ২১ জুলাই ২০২১ ০৬:১২
প্রতীকী চিত্র।
রেশন কার্ডের সঙ্গে দ্রুত আধার নম্বর জুড়তেও এ বার ‘দুয়ারে সরকার’। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, লক্ষ্য এখন এক ঢিলে দুই পাখি। প্রথমত, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে এক দেশ-এক রেশন নীতি কার্যকর করতে হবে শীঘ্র। তার জন্য আধার-যোগ জরুরি। দ্বিতীয়ত, সেই সূত্রে ভুয়ো বা ‘ভূতুড়ে’ কার্ড বাতিল হলে, এড়ানো যাবে বিপুল অপচয় (হিসেব সঙ্গের সারণিতে)। তা ঢালা যাবে অন্যান্য সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে। সুবিধা হবে ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি চালু করতেও।
এ রাজ্যে ভোট-রাজনীতির সঙ্গে ভুয়ো রেশন কার্ডের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। সেই বাম আমল থেকে এ নিয়ে অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ জারি। সে কথা মনে করিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন, আরও আগে প্রশাসন এ ব্যাপারে সতর্ক হয়নি কেন? সে ক্ষেত্রে তো বহু টাকার অপচয় রোখা যেত! সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে আধার-যোগ চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকে রাজ্যের আপত্তি ছিল। এক দেশ-এক রেশন ব্যবস্থাও প্রথমে চালু করতে চায়নি তারা। এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হয়েছে সরকারকে। তাই প্রশ্ন উঠছে, আধার-যোগের কাজ অনেক আগে সেরে ফেলতে পারলে, ভুয়ো কার্ড বাতিল করে বাঁচত কত টাকা?
প্রশাসন কর্তাদের একাংশের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে রেশন কার্ড ১০ কোটির বেশি। তার ১ শতাংশও (১০ লক্ষ) ভুয়ো চিহ্নিত হয়ে বাদ গেলে, শুধুমাত্র এক কিলোগ্রাম করে চাল দেওয়ার খাতেই বাঁচবে বছরে ৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সম্ভাব্য সাশ্রয়ের অঙ্ক বিপুল। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “কত শতাংশ মানুষের সত্যিই রেশন কার্ড প্রয়োজন, তার সমীক্ষা হওয়া দরকার। অতীতে অনেককে বেহিসেবি ভাবে কার্ড দেওয়া হয়েছে। আবার সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন অনেকের কাছে তা রয়েছে, যাঁদের তা পাওয়ার কথাই নয়। পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি।”
Advertisement
Advertisement
সিপিএম নেতা রবীন দেবের বক্তব্য, “এখনও ভুয়ো রেশন কার্ড আছে। সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।” রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “আধার যুক্ত হলে এবং সরকার আন্তরিক থাকলে, ভুয়ো কার্ড খুঁজে বার করা অসম্ভব নয়।”
সম্ভাব্য সাশ্রয়
• রেশনে মাসে এক কিলোগ্রাম চাল নিখরচায় দিতে রাজ্য সরকারের খরচ হয় প্রায় ২৮ টাকা।
• রাজ্যে মোট কার্ড ১০ কোটিরও বেশি।
• আধার যোগের পরে এর ১% কার্ডও ভুয়ো হিসেবে বাতিল হলে, বাদ যাবে অন্তত ১০ লক্ষ কার্ড।
• মাসে শুধু ওই এক কিলোগ্রাম চালেই জলে যাওয়া আটকাবে: (২৮X১০,০০,০০০) = ২,৮০,০০,০০০ টাকা
• বছরে: (২.৮X১২)= ৩৩.৬ কোটি টাকা
• এক-এক রেশন কার্ডে দেওয়া খাদ্যশস্যের পরিমাণ এক-এক রকম। বহু ক্ষেত্রেই চালের পরিমাণ অনেক বেশি। সঙ্গে রয়েছে আটা, গম ইত্যাদির খরচও।
• প্রশাসন সূত্রে দাবি, বিপুল টাকার অপচয় বাঁচিয়ে তা খরচ করা যাবে নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে।
বিরোধীদের প্রশ্ন
• বিপুল টাকার অপচয় রুখতে কেন আরও আগে নড়ে বসেনি রাজ্য? কেন আধার-যোগে গড়িমসি?
• সুপ্রিম কোর্ট এক দেশ-এক রেশন কার্ড চালুর সময় বেঁধে না-দিলে, এখনও টনক নড়ত কি?
প্রশাসনের অন্দরে পাল্টা দাবি, তৃণমূল সরকার আসার পরে ডিজিটাল রেশন কার্ডের কাজ শুরু হয়। তাতে বাতিল হয়েছে এক কোটিরও বেশি ভুয়ো কার্ড। কার্ডে আধার-যোগও শুরু হয়েছে গত বছর থেকে।
এক কর্তার বক্তব্য, “কেউ মারা গেলে, তাঁর কার্ড বাতিলের আবেদন করা পরিবারের কর্তব্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না।... আবার অনেকে এক ঠিকানা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আগেরটি বাতিল না-করেই নতুন কার্ডের আবেদন করেন।... আধার যোগ হয়ে গেলে, মৃত ব্যক্তির নামে কার্ড থাকা কিংবা এক ব্যক্তির দু’টি কার্ড থাকার সম্ভাবনা থাকবে না।” বিরোধীদের একাংশের প্রশ্ন, তবে কি এত দিন আধার-বিরোধী কড়া মনোভাবের খেসারত গুনেই জলে গিয়েছে বহু টাকা? রাজ্য অবশ্য বরাবর দাবি করেছে, শুধুমাত্র আধার না-থাকার কারণে কেউ কোনও সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হোন, তা তারা চায় না। এখন প্রায় সকলেই আধারে নথিভুক্ত হওয়ায় সেই বঞ্চনার সম্ভাবনা কম বলে দাবি।
খাদ্য দফতর জানাচ্ছে, ২৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কার্ডের সঙ্গে আধার-যোগের কাজ হবে। তাতে কেউ বাদ পড়লে, তাঁদের সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট পাড়ায় এক দিন করে শিবির হবে। ওই প্রক্রিয়া চলবে ২৫ অগস্ট পর্যন্ত। ২৫ অগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে শিবির হবে রোজ। ১ অগস্ট থেকে সমস্ত বাংলা সহায়তা কেন্দ্র এবং খাদ্য দফতরের অফিসে গিয়েও আধার সংযোগ করানো যাবে।
এক কর্তার কথায়, “আধার-যোগের কাজ হয়ে গেলে এক দিকে যেমন শুধু প্রকৃত উপভোক্তাই রেশন সামগ্রী পাবেন, তেমনই প্রতি কার্ডে দেওয়া খাদ্য সামগ্রীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকবে খাদ্য দফতরের হাতে।”
Advertisement