এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির মাংস খেতে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের শোকাবহ স্মৃতিবিজরিত সোহাগপুরের শহীদ পরিবারের বিধবারা। শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ সোহাগপুরের বিধবাদের কোরবানির জন্য একটি গরু কিনে দিয়েছেন। গতকাল ২০ জুলাই মঙ্গলবার কোরবানির গরুটি শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে খুশী শহীদ পরিবারের বিধবা ও তাদের স্বজনরা।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) হেলেনা পরাভীন বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কোরবানির গরু হস্তান্তরের ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে ইউএনও লিখেছেন, সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে শহীদ পরিবাবর্গকে শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক স্যারের দেয়া উপহার কোরবানির গরু হস্তান্তর। মহান আল্লাহতাআলা এ দান কবুল করুন। তার এ পোস্টের নিচে অনেকেই কমেন্ট করে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নজির আহমেদ নামে এক কলেজ শিক্ষক লিখেছেন, ‘আমার জানামতে একজন জেলা প্রশাসক পেলাম যিনি বিধবাপল্লীর জন্য প্রথম কোরবানির ব্যবস্থা করলেন। ধন্যবাদ স্যারকে। রবিউল ইসলাম নামে আরেকজন লেখেন, মানবতা বেঁচে আছে বলেই পৃথিবী এখনও বাসযোগ্য আছে।
সোহাগপুর বিধবাপল্লী শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পর সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বাসিন্দারা এবার নিজেদের করা কোরবানির মাংস খেতে পারবেন। এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। অনেকেই অনেকভাবে সহায়তা করেছেন। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক এবারের ঈদে কোরবানির ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তার প্রতি শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের অসীম কৃতজ্ঞতা। ৪৬ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির গরুটি জেলা প্রশাসক কিনে দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেরপুর নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামের বেনুপাড়া এলাকায় ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকহানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। হানাদার বাহিনীর গণধর্ষণের শিকার হন ১৪ নারী। এরপর থেকে সোহাগপুর গ্রামটি বিধবাপল্লী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধের পর ৫৬ জন বিধবা বেঁচে ছিলেন। বর্তমানে বেঁচে আছেন ২৩ জন।
প্রসঙ্গত, সোহাগপুর গণহত্যায় নেতৃত্বদানের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আল-বদর কমান্ডার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় হয়। সেই ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ '৭১ সোহাগপুর বিধবাপল্লীকে ‘সোহাগপুর বীরকন্যা পল্লী’ নামে ঘোষণা করেন।
এই রকম আরো খবর