comparemela.com


রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ উদযাপনে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর—সবখানেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। এতে লাখো মানুষের চাপ পড়ে ঢাকার সড়কে। গতকালের মতো আজও ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অব্যাহত আছে দীর্ঘ যানজট। মহাসড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গাজীপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে প্রগতি সরণী, বনানীসহ বিভিন্ন সড়কে। যানজটে রাজধানী একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে।
এছাড়া দেশের প্রধান দুই ফেরি রুট পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-কাঠালবাড়িতেও গতকালের তুলনায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলগামী শতশত যানবাহন। ঘাটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। যাত্রীচাপ বেড়েছে লঞ্চে।
সোমবার ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় এদিন ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। দূরপাল্লার বাসের টিকিট পায়নি অনেক যাত্রী। যারাই পেয়েছে, তাদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। গত কয়েক দিনের তুলনায় লঞ্চঘাটের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। বেশির ভাগ লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঘাট ছেড়েছে।
আন্ত নগর ট্রেনের ছবি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও লোকাল ট্রেনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ঢাকার বাইরে চলাচল করা লোকাল ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। কমলাপুর থেকে কমিউটার ট্রেনগুলোর সব আসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের চাপ শেষ বেলায় ঢাকার সীমানা এলাকায়ও পড়েছে। ফলে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে দুপুরের পর থেকে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কের ভোগান্তি বিমানেও ঠেকে। অনেক বিমানই নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছতে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে। তবু ট্রেন ও বিমানযাত্রার সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেনি। আর পুরো ঈদ যাত্রায় কোথাও করোনা স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানতে দেখা যায়নি।
রাজধানীতে ভয়াবহ যানজট : গতকাল সকালে ঢাকার সড়ক কিছুটা ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে যানজট বাড়তে থাকে। বিশেষ করে রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে সৃষ্টি হওয়া যানজটের রেশ পড়ে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। গাজীপুরের যানজট বিমানবন্দর-বিশ্বরোড হয়ে মহাখালী ও রামপুরা পর্যন্ত এসে ঠেকে। গাবতলী ঘিরে সাভার, আমিনবাজার হয়ে কল্যাণপুর, মিরপুর পর্যন্ত যানজট হয়। সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান এলাকার পরিস্থিতিও ছিল বেজায় খারাপ। গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত হয় কোরবানির পশুর হাট। নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে পশুর হাট বসায় এর প্রভাব পড়ে মূল সড়কে। এতেও যানজটের মাত্রা তীব্র হয়।    
মিরপুর ১৪ নম্বরে রাস্তার দুপাশেই গরুর হাট বসানোতে সেখানে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। ক্যান্টনমেন্টের দিকে খুবই ধীরগতিতে গাড়ি চলে। অনেকক্ষণ একই জায়গায় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। আবার ক্যান্টনমেন্ট ও কচুক্ষেত এলাকা থেকে গাড়িগুলো বের হয়েও এগোতে পারছিল না। বিকেল ৪টায় মাটিকাটা এলাকা দিয়ে বনানী ও শেওড়া অভিমুখী ফ্লাইওভারেও যানজটে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। ফ্লাইওভার থেকে নেমেও নিস্তার নেই। কুড়িল ফ্লাইওভারে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে যানজট পাওয়া না গেলেও নামার পরই শুরু হয় অপেক্ষা। সেই যানজট গিয়ে ঠেকে পূর্বাচলমুখী তিন শ ফুট সড়কে।
ঢাকার গণপরিবহনে উপচে পড়া ভিড় : যানজটের কারণে সড়কে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। এতে গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ে। রাজধানীর বেশির ভাগ বাসে দুই আসনে বসার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
দূরপাল্লার বাসে বাড়তি ভাড়া, শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি : ঈদ যাত্রায় দূরপাল্লার বাসেও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে সঠিক সময়ে টার্মিনালে বাস পৌঁছতে পারেনি। এতে শিডিউল (সময়সূচি) বিপর্যয় দেখা দেয়। অনেক বাসে পাশাপাশি আসনে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। তবে যারা এক আসনে বসে যেতে চেয়েছে তাদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। সকালে সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কমলাপুর ও মহাখালীতে যাত্রীর চাপ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে বাসের জন্য অনেক যাত্রীই অপেক্ষা করেছে। সকাল সাড়ে ৭টার বাস ১১টায়ও ছেড়ে যেতে পারেনি। তবে গাবতলী টার্মিনালে সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ ছিল। এখান থেকেও সঠিক সময়ে বাস ছেড়ে যেতে পারেনি।
গাবতলী বাস টার্মিনালে গতকাল স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। প্রতিটি বাসে প্রতি আসনে যাত্রী নেওয়া হয়েছে। বাসগুলো টার্মিনালে ঢুকে যাত্রী নামানোর সঙ্গে সঙ্গে বাসে উঠে পড়েছে অপেক্ষারত যাত্রীরা। কোনো বাসেই জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ যাত্রীর মাস্ক ছিল না। টার্মিনালে কোনো তদারকিও দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি বাস পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
লোকাল ট্রেনে যাত্রীর ভিড় : আন্ত নগর ট্রেনের চলাচল তুলনামূলক স্বাভাবিক হলেও লোকাল (মেইল/কমিউটার) ট্রেনে গতকাল যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ লক্ষ করা গেছে। ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় লোকাল ট্রেনের ছাদেও যাত্রী উঠতে দেখা গেছে। খোদ কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি আসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কমিউটার ট্রেনের কাউন্টারে যাত্রীদের লম্বা সারি। কমলাপুর থেকে ৯ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের শতভাগ আসনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এমনকি অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না লঞ্চে : গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল লঞ্চের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে খারাপ। প্রায় সব লঞ্চেই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়তে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধির ছিটেফোঁটাও ছিল না ঢাকার লঞ্চঘাটে। বিআইডাব্লিউটিএর পক্ষ থেকে শুধু দায়সারাভাবেই করোনা সচেতনতার মাইকিং করা হয়।
সড়কের ভোগান্তি বিমানে ঠেকেছে : গতকাল সড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে অনেক যাত্রীই নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে পারেনি। যাত্রীর অপেক্ষায় বেশ কিছু ফ্লাইট বিমানবন্দর থেকে দেরি করে ছাড়া হয়। তবু নভোএয়ারের অন্তত ১০০ যাত্রী ফ্লাইট ধরতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ফ্লাইট ধরতে না পারা যাত্রীর সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি। তবে ইউএস-বাংলা থেকে জানানো হয়, যাত্রীর অপেক্ষায় তাদের অনেক ফ্লাইটই দেরি করে ছাড়া হয়েছে।
পরিবহনসংকটে ভোগান্তি বেড়েছে গাজীপুরের শ্রমিকদের : গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে গতকাল সারা দিনই থেমে থেমে যানজট ছিল। যানজটের কারণে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। এই যানজট এক পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, অন্য পাশে বিমানবন্দর হয়ে বনানী পর্যন্ত এসে ঠেকে। দুপুরে কলকারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হলে ভিড় বাড়তে থাকে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। বাস না পেয়ে ঘরমুখী যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে ঢাকা বাইপাস ও ঢাকা-টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে অন্য দিনের তুলনায় যানজট অনেকটাই কম ছিল।
পাটুরিয়া ঘাটে মানুষের ভিড়-বৃষ্টি একাকার : বৃষ্টি আর ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে একাকার ছিল মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট। সকালে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা কম থাকলেও দুপুরের পর তা বাড়ে। ছোট-বড় গাড়িসহ দূরপাল্লার বাসের অপেক্ষমাণ সারি দীর্ঘ হয়। যানবাহনের চাপ থাকলেও ফেরি দ্রুতই নদী পার হয়। তবে বৃষ্টি ঈদ যাত্রার ভোগান্তির কারণ হয়েছে।
শিমুলিয়ায়ও মানুষের ঢল : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণবঙ্গের একুশ জেলার ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। যাত্রীর ঢলের কারণে ফেরিতে উঠতে পারেনি অনেক যান। যাত্রীদের হুড়াহুড়িতে লঞ্চঘাটে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি।
সাভারের সড়কে পরিবহনে ধীরগতি : সাভার ও আশুলিয়ার তিনটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধীরগতিতে চলে পরিবহন। দীর্ঘ যানজটের কারণে ১৫-২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে ধামরাইয়ের ইসলামপুর পর্যন্ত এবং হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত (ঢাকামুখী সড়ক) দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেককেই হেঁটে চলতে দেখা গেছে।
পদ্মায় প্রবল স্রোতে দ্বিগুণ সময়ে ফেরি পার : পদ্মা নদীতে স্রোত বেশি থাকায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল করতে দ্বিগুণ সময় লাগে। ফেরিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার পথ উজানে ঘুরে পারাপার হয়। এ পথে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ ছিল; মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা]
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Gulistan ,Balochistan ,Pakistan ,Mirpur ,Punjab ,Mymensingh ,Bangladesh General ,Bangladesh ,Padma ,Barisal ,Dhaka ,Manikganj ,Bengali ,Kalyanpur ,Shimulia ,Rangpur ,Rampura ,Multan ,Eid Adha ,Nabinagara Dhamrai ,Kuril Bishwa , ,Bus Terminal ,Progress Tables ,Shimulia Terminal ,Monday Eid ,Terminal Bus ,Badam Terminal ,Badam Bus Terminal ,Shimulia Terminal Southern ,Driver Ferry ,குலிஸ்தான் ,பலூசிஸ்தான் ,பாக்கிஸ்தான் ,மிற்புர் ,பஞ்சாப் ,ம்ய்மேஞ்சிங்க் ,பங்களாதேஷ் ,பத்மா ,பாரிசல் ,டாக்கா ,மணீக்காஞ்ச ,கல்யாண்பூர் ,ஷீமுழிய ,ரங்க்பூர் ,ராம்புரா ,முல்தான் ,குரில் பிஷ்வா ,பேருந்து முனையத்தில் ,முனையத்தில் பேருந்து ,நதி படகு ,

© 2025 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.