comparemela.com


বংশ-গোত্র, সাদা-কালো, ধনী-গরিব, দেশ বা অঞ্চল—এসব কোনোটির ভিত্তিতেই ইসলাম ব্যক্তিকে পরিমাপ করে না। তাহলে ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি কী? সেটা হলো তার কর্ম, বিশ্বাস ও চরিত্র। কেননা এ ছাড়া পূর্বোক্তগুলো হচ্ছে মানব জাতির সৃষ্টিগত গুণাবলি। সৃষ্টিগত গুণাবলির মাধ্যমে পরিচয় নির্ধারণ করা হলেও এগুলোর মাধ্যমে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব মাপা বোকামি। কেননা সৃষ্টিগত গুণাবলি কোনো মানুষের হাতের কামাই নয়; বরং তা শুধু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে।
অতএব এমন সব গুণ, যেগুলো অর্জনের ক্ষমতা মানুষের নেই, সেগুলোর কোনোটির মাধ্যমে কোনো মানুষের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হতে পারে না। তদ্রূপ এ জাতীয় গুণাবলিতে কোনো দোষারোপ বা নিন্দা করাও যায় না। তাই ইসলাম মানুষকে মাপার নির্দেশ দেয় তার শেষ্ঠ কর্ম ও সুউচ্চ চরিত্রের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত, যে সর্বাধিক খোদাভীরু।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
বংশে নয়, কর্মেই মানুষের ব্যক্তিত্ব  নির্ণিত হয় : আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৫৩)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং বলেন, হে জনমণ্ডলী! তোমাদের থেকে আল্লাহ তাআলা জাহেলি যুগের দম্ভ-অহংকার এবং পূর্বপুরুষদের নিয়ে গৌরব ও আভিজাত্যবোধ বাতিল করেছেন। এখন মানুষ দুই অংশে বিভক্ত—একদল মানুষ নেককার-পরহেজগার। তারা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় ও সম্মানিত এবং অন্য দল পাপিষ্ঠ, দুর্ভাগা। তারা আল্লাহ তাআলার কাছে নিকৃষ্ট, নিচু ও ঘৃণিত। সব মানুষ আদম (আ.)-এর সন্তান। আর আল্লাহ তাআলা আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন...। (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৭০) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘জেনে রেখো! জাহেলি যুগের গৌরব ও আভিজাত্যবোধের দাবিদার সব কিছু এবং রক্ত ও সম্পত্তি সম্পর্কিত যাবতীয় অন্যায়-অভিযোগ আজ আমার দুই পদতলে নিপিষ্ট। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৫৪৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের এবং কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন শ্বেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গের তুলনায় এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ একজন শ্বেতাঙ্গের তুলনায় ঊচ্চতর নয়। পার্থক্য নির্ণিত হয় শুধু মানুষের চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৪৮৯)
শুধু বংশমর্যাদা কাউকে অগ্রসর  করতে পারে না : পিতৃপুরুষের ভালো-মন্দ অর্জন তাদের জন্যই। উত্তরসূরিদের সেগুলোর ভালো নিয়ে গর্ব করে করে কালাতিপাত করার সুযোগ ইসলামে নেই। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা এমন এক দল, যারা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্য, আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩৪)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার কর্ম তাকে পেছনে ফেলে রেখেছে তার বংশমর্যাদা তাকে অগ্রসর করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
উকবা ইবনে আমের (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের বংশপরিচয় কাউকে গালি বা লজ্জা দেওয়ার বিষয় নয়। কেননা তোমরা সবাই আদমের সন্তান। সবাই একই মাপের পেয়ালার মতো সমপরিমাণ। একে অন্যের ওপর তোমাদের কোনো প্রাধান্য নেই—দ্বিন পালন ও নেক আমলে অগ্রসরতা ছাড়া। মানুষের ত্রুটি ও লজ্জার বিষয় হলো দুর্ব্যবহার, অশ্লীলতা, কৃপণতা, কাপুরষতা ইত্যাদি।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭৩১৩)
মনীষীদের চোখে বংশগৌরব : সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় দুজন লোক বংশমর্যাদা নিয়ে অহংকার করছিল। তখন তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার আকাঙ্ক্ষা এটিই যে আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতে আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন, আর এ অবস্থায় যদি আমি কোনো গাধার পায়খানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি এবং আমার কোনো বংশগৌরব না-ও থাকে, তবু এতে আমার কোনো আফসোস নেই। (জামে ইবনে ওয়াহাব, হাদিস : ৪৩)
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, আমার আকাঙ্ক্ষা এটিই যে আল্লাহ তাআলা আমার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন, আর আমার কোনো বংশগৌরব যদি না-ও থাকে। (জামে ইবনে ওয়াহাব, হাদিস : হাদিস ২৮)
ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) একবার বলেন, আমার চাওয়া এমন যে আমার বাবা (দূর হাবশা দেশ থেকে আগত গোলাম সাহাবি) বেলালের বাবার মতো হোক, আমার মা বেলালের মায়ের মতো হোক এবং আমি বেলালের মতো হবো, আর এভাবেই আমার জীবন শেষ হবে। (জামে ইবনে ওয়াহাব, হাদিস : ১৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের বংশগৌরবে লিপ্ত না রেখে নিজ নিজ কর্মের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন! আমিন!
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Mecca ,Makkah ,Saudi Arabia ,Musnad Ahmad ,Sunan David ,Abu Huraira ,Sahih Bukhari ,Sahih Muslim , ,Being Human ,Creator Allah ,Allah Messenger ,Bin Omar ,Islam Not ,Uqba Bin ,Abdullah Bin Mas Ud ,Jami Bin Wahab ,Omar Bin ,மெக்கா ,மக்கா ,சவுதி அரேபியா ,இருப்பது மனிதன் ,உருவாக்கியவர் அல்லாஹ் ,அல்லாஹ் தூதர் ,பின் ஓமர் ,இஸ்லாம் இல்லை ,ஓமர் பின் ,

© 2024 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.