নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপে হাসেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটির পাঁচ ও ছয় তলায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। শনিবার (১০ জুলাই) সকালে তৃতীয় দিনের মতো এই অভিযান শুরু করা হয়। এর আগে শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডে ভবনটিতে আটকে পড়া হতাহতের উদ্ধারে সারা রাত অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস।
বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিকেল ৫টায় এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।
ওদিকে শ্রমিক এবং তাদের স্বজন ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের সূত্রে বলা হচ্ছে, কারখানা ভবনের চার তলায় ছাদে ওঠার সিঁড়ির মুখের দরজাটি তালা বন্ধ থাকায় অনেক মানুষ ছাদে উঠে প্রাণরক্ষা করতে পারেননি। তবে ওই কম্পানির একজন ব্যবস্থাপক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আগুন লাগার কারণ খুঁজতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন তদন্তের ঘোষণা করেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন কারখানাটির চার তলা বন্ধ থাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র না থাকার অভিযোগ করেছে। তবে এই বিষয়ে কারখানার মালিকের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মালিকের পক্ষ থেকে কম্পানির এক ম্যানেজার কাজী রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, অগ্নিনির্বাপণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। ভবনের নিচতলায় আগুন লাগায় তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভবন তালাবদ্ধ থাকার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটি মিথ্যা কথা, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।'
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন নেভানোর পর চার তলায় তালাবদ্ধ থাকায় এক জায়গা থেকেই তারা ৪৯ জনের লাশ পেয়েছেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, নিচ তলায় আগুন ধরার পর আতঙ্কে সবাই উপরে উঠেছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি পূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ডিসি মহোদয় এবং ডিআইজির সাথে কথা বলা হয়েছে। এটা আমাদের মালিক পক্ষ দেখবে। এদের ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণ ম্যানেজমেন্ট দেবে।'
কিন্তু ক্ষতিপূরণ ছাড়াও এত প্রাণহানির দায়বদ্ধতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজী রফিকুল ইসলাম একে 'মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন' অভিযোগ বলে মন্তব্য করেন।
কারখানাটির মালিকের পক্ষ থেকে অসংগতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করা হলেও ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেছেন, ভবনে চারতলায় সিঁড়ির গেট তালাবন্ধ থাকায় সেখানে আটকা পড়া প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে। এক জায়গা থেকেই তারা ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
দেবাশীষ বর্ধন আরো বলেছেন, মৃতদেহগুলো আগুনে পুড়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে নারী, পুরুষ কিংবা পরিচয়- তাদের পক্ষে কোনকিছুই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা কারখানার ভবনে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগও তুলেছেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, তাদের তদন্তে সব অভিযোগ খতিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যারা ছিলেন, তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, তারা সন্দেহ করছেন, একটা শট সার্কিট থেকে আগুনের উৎপত্তি হতে পারে এবং যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র না থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া জুসের কারখানা ক্যামিকেল এবং পলিথিন ছিল, সেকারণেও আগুন দ্রুত ছড়িছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছে।'
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
এই রকম আরো খবর