comparemela.com


রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকায় কাঁধে ঝোলানো টুকরিতে করে পান বিক্রি করেন গফফার আলী নামের এক যুবক। ছয় মাস ধরে চলছে তাঁর এই ব্যবসা। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে তিনি কাজ করতেন মিরপুরের একটি গার্মেন্টসের অপারেটর হিসেবে। অভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আগেই আবার লকডাউন দেওয়ায় বেশ চিন্তিত তিনি।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ঢাকা শহরে থাকতাম বউ-পোলাপান নিয়া। এহন আছি একা, তাগো দ্যাশে পাঠায় দিছি। সরকার তো আবার লকডাউন দিল খামু কী? যে বেচাকেনা হয় তাতে চলা কঠিন।’ তাঁর দাবি আগে সরকার খাবার দিক তারপর লকডাউন।
একই কথা রিকশাচালক আসলামুলের মুখেও। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাস্তায় তো মানুষ নাই তাইলে কেমনে ভাড়া মারমু আর কেমনে চলমু। গেল বছর তো সবাই খাবারদাবার দিছে, কিন্তু এবার তো কেউ কিছুই দেয় না। সব জায়গায় গরিবের মরণ। খাবার নাই, দাবার নাই, রাস্তায় লোকও নাই।’
করোনাকালে গোটা বিশ্বের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এদিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একেবারেই নিম্ন আয়ের মানুষ। বেকার হয়েছেন অনেকে। যাঁরা ফের কাজে যোগ দিয়েছেন তাঁদের কমেছে আয়।
করোনাকালীন বাংলাদেশে কত মানুষ দরিদ্র হয়েছেন তার হিসাব নেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে বেড়েছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। তাঁরাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন করোনাকালীন লকডাউনে। তারা বলছে, পেটের দায়ে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামে বিশেষ করে দরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষ। কারণ তাদের ঘরে খাদ্য মজুদ থাকে না। তাই আগে দরকার সুষ্ঠু ত্রাণব্যবস্থা, তাহলেই লকডাউন অনেকটা বাস্তবায়িত হবে।
সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) করা এক পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালীন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের আয় কমেছে ৩৮ শতাংশ। দিনমজুরদের আয় কমেছে ৬৬ শতাংশ। নারীদের আয় কমেছে ৬৮ শতাংশ। পুরুষদের আয় কমেছে ৬৭ শতাংশ আর এদিক দিয়ে সব থেকে নাজুক অবস্থায় আছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাঁদের আয় কমেছে ৭৭ শতাংশ। মূলত গবেষকদলটি এই গবেষণাটি ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ১০ হাজার ৬৪টি খানার ওপর করেছিল।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেখা গেছে, কভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।
এই জরিপ বলছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪.৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১.২৪ শতাংশ। জরিপে যাঁরা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাঁদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪.৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সিএনজিচালক মোবাশ্বের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লকডাউনে ইনকাম নাই, মানুষ রাস্তায় আসে না। দুই-চারটা অফিসের টিপ থাকে আর কি? তাতে জমার টাকাই ওঠে না। সব কিছু বন্ধ আমরা খাব কী—তাইলে পেট কি লকডাউন বোঝে?’
করোনা সংক্রমণ আর ভ্যাকসিন কার্যক্রম সঠিকভাবে না হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড কলামিস্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি সাবেক হলে হয়তো দিনমজুরদের আয় বাড়বে, কিন্তু সে স্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে কবে? তবে আমাদের হাতে কিন্তু সুযোগ আসছে, আমরা বায়ার পাচ্ছি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ভালোভাবে করতে পারলে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অর্থনীতি সচল হবে, পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের আয় বাড়বে।’
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Bangladesh ,Mirpur ,Bangladesh General , ,Institute Ab Governance ,Centre For Pcs ,Participation Research Centre ,Snot Bangladesh ,New Poor ,பங்களாதேஷ் ,மிற்புர் ,பங்கேற்பு ஆராய்ச்சி மையம் ,புதியது புவர் ,

© 2025 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.