কার্যাদেশ পেতে জামানতের ভুয়া পে-অর্ডার জমা দিয়ে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের মীর মশাররফ হোসেন সেতুর টোল আদায়ের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।
টোল আদায়ের মেয়াদ শেষে তিন বছর পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই পে-অর্ডার সাউথইস্ট ব্যাংকে ভাঙাতে গেলে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুন) জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সাউথইস্ট ব্যাংক ও সড়ক জনপথ বিভাগ- কেউই এ ঘটনার দায় নিতে চাইছে না। তারা একে অপরকে দোষারোপ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের গড়াই নদীর ওপর নির্মিত মীর মশাররফ হোসেন সেতুতে টোল আদায়ের দরপত্রে অংশ নিয়ে ৬ কোটি টাকায় তিন বছরের জন্যে টোল আদায়ের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি এন্টারপ্রাইজ। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী পর পর চার কিস্তিতে টোলের টাকা পরিশোধ করার কথা। এক্ষেত্রে দুই কিস্তির আড়াই কোটি টাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জামানত হিসেবে রেখে দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকার দুটি পে-অর্ডার সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুষ্টিয়া অফিসে জমা দেন।
কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু দুই কিস্তির টাকার সমপরিমাণ টাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আগেই জামানত হিসেবে জমা রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে কারণে টোল আদায়ের মেয়াদ শেষে টোলের টাকার শেষ দুটি কিস্তির জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ ওই পে-অর্ডার দুটি সাউথইস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় ভাঙাতে গিয়ে জানতে পারে সেগুলো জাল। এ ঘটনার পর বিপুল পরিমাণ এই টাকা আত্মসাতের দায় এখন কেউ নিতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হালিমুজ্জামান বলেন, দরপত্রে অংশ নেওয়ার পর আমরা জামানতের দুটিসহ মোট ছয়টি পে-অর্ডার সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমা দিয়েছিলাম। সড়ক ও জনপথের তৎকালীন কর্মকর্তারা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়ে যাচাই করে তারপর আমাদের কার্যাদেশ দেন। পরে সড়ক জনপথ বিভাগ জামানতের দুটি পে-অর্ডার ছাড়া বাকি চারটি পে-অর্ডার ভাঙিয়ে ক্যাশও করে নেন। এখন আমার চুক্তির মেয়াদ শেষে তিন বছরের মাথায় তাঁরা বলছেন পে-অর্ডার জাল।
হালিমুজ্জামান বলেন আরো বলেন, 'সাউথইস্ট ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন কারসাজি করে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে আমার মনে হচ্ছে। ওই ব্যবস্থাপক অন্য অপরাধের দায়ে অনেক আগেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, 'পে অর্ডার দুটি ব্যাংকে ক্যাশ করতে গিয়ে ধরা পড়ে এ দুটি আসল নয়, জাল।' তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে ঠিকাদার আপসে টাকা দিলে ভালো, না হলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে টাকা আদায় করা হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা এর দায় এড়াতে পারে না। সে কারণে তাদের এই মামলায় পক্ষভুক্ত করা হবে।'
সাউথ ইস্ট ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা বর্তমান ব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরাও ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যে সময়ের ঘটনা, তখন জাকির হোসেন নামের একজন এখানে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।'
এই রকম আরো খবর