জাতীয়
বাগেরহাটে ১৪ বেইলি ব্রিজের বেহাল দশা, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা
এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
বাগেরহাট: বাগেরহাটের দু’টি সড়কের ১৪ বেইলি ব্রিজ এখন পথচারী ও যানবাহন চালকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ বেইলি ব্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে।
কোথাও কোথাও স্টিলের পাত ভেঙে পড়েছে। আবার কোথাও মরিচা পড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী, পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে।
পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের। এ অবস্থায় দ্রুত ব্রিজগুলো সংস্কার অথবা পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সড়ক বিভাগ বলছে, বেইলি ব্রিজের স্থলে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মাওয়া পুরাতন মহাসড়ক ও সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৪টি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এসব ব্রিজ প্রায় অর্ধশত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে বেশির ভাগ ব্রিজের অবস্থা এখন নাজুক। এর মধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার নাশুখালী বাজার সংলগ্ন ব্রিজ, পাগলার বাজার ব্রিজ, চরকুলিয়া ব্রিজ, হারিদহ ব্রিজ, মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতি বেইলিব্রিজ, শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া ব্রিজ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ব্রিজের সামনে সড়ক বিভাগ থেকে সতর্ক বার্তা লিখে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ডে ‘সাবধান ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ’ লেখা থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়তই ভারী-হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ফলে মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
চরকুলিয়া ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী মো. মাসুদ সরদার ও মিজানুর রহমান বলেন, মোল্লহাট উপজেলার অন্যতম বড় বাজার চরকুলিয়া। এখানে প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ বাজার করতে আসে। কিন্তু ব্রিজটি ভাঙা থাকায় অনেক বিড়ম্বনায় পরতে হয় তাদের।
চুরকুলিয়া ব্রিজে দুর্ঘটনায় আহত মো. সোহেল বলেন, ব্রিজের ওপর দিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটি পাত ভেঙে নিচে পরে যাওয়ায় আমার পাসহ সাইকেলের চাকা ব্রিজের মধ্যে ঢুকে যায়। এতে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। কয়েকদিন আগে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ভ্যানও এভাবে পড়ে যায়। ওই সময় অন্তত তিনজন ছাত্রী আহত হয়। এভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চরকুলিয়া বেইলি ব্রিজে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাগলার বাজার বেইলি ব্রিজ থেকে নছিমন ভর্তি গাছ বহন করতে দেখা যায় চালক সুন্দর আলীকে। তিনি বলেন, ভাই আমরা তো গাছ ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করি। কি করব? এ রাস্তা ছাড়া আমাদের বিকল্প রাস্তাও নেই। তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নছিমন নিয়ে বেইলি ব্রিজ পার হই।
আব্দুল মালেক নামে এক কিশোর বলে, কয়েকদিন আগে চাকা পাতের ফাঁকে ঢুকে কই মাছ বহনকারী একটি ভ্যান উল্টে যায়। এতে ভ্যানের সব কই মাছ নদীতে পড়ে যায়। কই মাছ ওয়ালা খুবই আফসোস করলেও করার কিছু ছিল না।
হারিদহ ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই ছোট খাট দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের এ ব্রিজে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ অবস্থা দেখতে হয় আমাদের। পথচারীদের চলাচল ও গাড়ি চালকদের সুবিধার জন্য আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এ ব্রিজটি একবার সংস্কারও করেছি। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি, আবার যা তাই হয়ে গেছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী এলাকার ভ্যানচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্রিজটি এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারি ভালোভাবে ভ্যান চালাতে, না পারে সাধারণ মানুষ শান্তিতে চলাচল করতে। দ্রুত এসব সেতু সংস্কারের দাবি জানান তারা।
মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, গাওলা ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক ও জনপথের পুরনো রাস্তার ওপর চারটি বেইলি সেতু রয়েছে। তার প্রত্যেকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এসব সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। যে কোনো সময় ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। সবজিসহ পণ্য পরিবহনেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। দ্রুত সেতু পুনঃনির্মাণ অথবা সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুরাতন বেইলি সেতুর স্থলে আরসিসি সেতু তৈরির জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রলায়ের অনুমোদন শেষে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্র আহ্বান শেষে যত দ্রুত সম্ভব আরসিসি সেতু তৈরির জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব বেইলি ব্রিজের সমস্যার সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২১
এসআই