হাতের পরশে জীবনসংগ্রাম
মুদি দোকানে আনোয়ার [ছবি: ইত্তেফাক]
সামসুজ্জামান পনির, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা০৮:৫৯, ০৬ জুলাই, ২০২১ | পাঠের সময় : ১.৬ মিনিট
সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের গুয়াখোলা গ্রামে ১৯৬৬ সালে অভাবের সংসারে জন্ম আনোয়ারের। ১০ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ার তৃতীয়। তিন বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে আনোয়ারের দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তার কয়েক বছর পর বড় ভাই হাসেম ও মেঝ ভাই হালিম ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে রেখে মারা যান। তখন একান্নবর্তী সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে অন্ধ আনোয়ারের ওপর। এ দুরবস্থা ও হতাশার মধ্যে আনোয়ার বৃদ্ধা মা ও দুই ভাইয়ের সংসারের সদস্যদের নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন।
এক সময় উপায়ন্তর না পেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। কিন্তু অন্ধ আনোয়ারের সংগ্রামী মন এ পেশাকে বেশি দিন মেনে নিতে পারেননি। তাই আত্মনির্ভরশীল হতে ২০ বছর বয়সে ধারদেনা করে সামান্য পুঁজি নিয়ে ছোট ভাই জাকিরের সহযোগিতায় গ্রামে রাস্তার পার্শ্বে ছোট মুদি দোকান শুরু করেন। কিন্তু এ আয়ে সংসারের ন্যূনতম প্রয়োজন মিটাতে না পারায় ছোট ভাই বাধ্য হয়ে এক বছর পর বাড়তি আয়ের জন্য অন্যত্র কাজে চলে যান। তখন ব্যবসা চালানোর পুরো দায়িত্ব নেন অন্ধ আনোয়ার।
তিনি জানান, আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণী যে, তিনি হাতের স্পর্শেই দোকানের পণ্য বেচাকেনা ও ভিন্ন মানের টাকা-পয়সা চিনতে পারেন। তবে বাজারে নতুন কোনো মুদ্রা চালু হলে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হয়। তখন ক্রেতার সহযোগিতা চান। এরই মধ্যে ভাইদের সন্তানরা বড় হলে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দেন। এভাবে ব্যবসার কয়েক বছর পর সংসারের অভাব কিছুটা কমে আসে। ২৮ বছর বয়সে আনোয়ার পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক মেয়ে ও দুই ছেলে।
আনোয়ার জানান, কয়েক বছর যাবৎ ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। আশপাশে অনেক দোকান হয়েছে। ক্রেতা কমে গেছে। মেয়ে বড় হয়েছে, টাকার অভাবে তাকে বিয়ে দিতে পারছেন না। ধারদেনা করে ছেলেকে অটোরিকশা কিনে দিয়েছিলেন। কয়েক দিন চালানোর পর ছেলেকে নেশা জাতীয় ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা । তাই এ বয়সে শরীর খারাপ, চিন্তা ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বড়ই কষ্টে আছেন। তাই দুরবস্থা লাঘবে হৃদয়বানদের সহায়তা চান তিনি।
ইত্তেফাক/এমআর