comparemela.com


এক দিনে করোনায় ও উপসর্গে ২২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এদের মধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেই মারা গেছেন ১৯জন। একই সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭৫জন। এটাই মৃত্যুর সংখ্যায় বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য বিভাগের এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে বরিশালজুড়ে করোনার ভয়াবহতার কথা। করোনার কারনে দিনের পর দিন বাড়ছে লাশের মিছিল। সর্বশেষ মিছিলে যোগ হয়েছে আরো ২২ জন। আগামীতে এই সংখ্যা বেড়ে যাবে। কিন্তু সেই তুলনায় কমছে কফিনের বিকিকিনি। সোমবার (১২ জুলাই) মাত্র একটি কফিন বিক্রি হয়েছে!
পরিসংখ্যান বলছে, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই লাশগুলো তাদের স্বজনরা কফিনে করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেই হিসেবে ১৯টি কফিনের দরকার। কিন্তু বরিশাল নগরীর চাঁদমারী এলাকার একমাত্র কফিন প্রস্তুতকারি সোমবার মাত্র একটা কফিন বিক্রি করেছেন।
কারন খুজতে গিয়ে জানা গেল, চলতি বছরের ২৮ জুনের পর হঠাৎ করেই করোনা ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। একদিকে মৃত্যুর মিছিল, অপর দিকে সংক্রমিত রোগীর চাপ বাড়ত থাকে করোনা ওয়ার্ডে। তাই দ্রুত লাশ সরিয়ে, সেই শয্যায় আক্রান্তদের ভর্তির জন্য কফিন ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এক দি‌নে ২২ জ‌নের মৃত্যু
বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। যা নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে নতুন করে ৫৭৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১০ জন। এদিকে সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২হাজার ৬৮৪ জন।
বরিশাল জেলায় নতুন সর্বোচ্চ ২১৬ জন নিয়ে মোট ৯ হাজার ৬১২ জন,পটুয়াখালী জেলায় নতুন ৪৯ জন নিয়ে মোট ২৮৯২ জন, ভোলা জেলায় নতুন ৩৭ জন সহ মোট ২২৯৩ জন,পিরোজপুর জেলায় নতুন ৯৪ জন নিয়ে মোট ৩১৯৭ জন, বরগুনা জেলায় নতুন ৬৬ জন নিয়ে মোট আক্রান্ত ১৯০৩ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ১১৩ জন শনাক্ত নিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৮৭ জন। 
জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড চালু
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের পর এবার জেনারেল (সদর) হাসপাতালে করোনায় ওয়ার্ড চালু হয়েছে। সোমবার ২২ শয্যার ওয়ার্ডে একজন রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৩০০ শয্যার সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৩০৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে সদর হাসপাতালে নতুন করে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
এখন থেকে সরাসরি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করা হবে। জেনারেল হাসপাতালের প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্সরা চিকিৎসা সেবা দিবেন। মুমুর্ষ রোগীদের শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউতে পাঠানো হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার বড়াল কৃষ্ণ মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, জরুরি বিভাগের পাশেই ডায়েরিয়া ওয়ার্ড। যেহেতু এখন ডায়েরিয়ার প্রকোপ নেই। তাই ডায়রিয়ার ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। সেখানে সেন্টাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
এখানে সরাসরি রোগী ভর্তি করা হবে। যাদের অবস্থা খুবই খারাপ, আইসিইউর প্রয়োজন হবে, তাদেরকেই শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হবে। তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড রোগী সামাল দিতে পারছিল না। তাই সদর হাসপাতালে নতুন করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
কফিনে নজর নেই স্বজনদের
চাঁদমারী এলাকার কফিন প্রস্তুতকারক বাদশা মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, কাঠের বাক্সযোগে বরিশাল থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হতো। আশি দশকের দিকে তিনি বাক্স তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে অপমূত্যুর লাশ স্বজনরা নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঠের কফিন বানিয়ে নিতেন। একপর্যায়ে তিনি কফিন তৈরীর পেশা বেছে নিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডিজিট্যাল ব্যানারের জন্য কাঠের ফ্রেম তৈরীতে হাত লাগান। করোনাকালে প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারনে ব্যবসায় ধ্বস নামে। পাশাপাশি করোনা ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যুর কারনে কফিনের চাহিদা বাড়তে থাকে।
বাদশা মিয়ার তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রায় ১৪ মাসে তিনি ৮০০ বেশি কফিন বিক্রি করেছেন। প্রতিটি কফিন গড়ে দেড় হাজার থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। করোনা ওয়ার্ডে রোগী মারা গেলে শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কফিনের জন্য বলতেন। সে অনুযায়ী স্বজনরা এসে কফিন নিয়ে যেতেন। মাঝে মাঝে পুলিশ প্রশাসন কফিন নিতেন। কিন্তু ২৮ জুনের পর করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কফিন বাধ্যতামূলক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। স্বজনরা যেভাবে পারছেন, করোনা ওয়ার্ড থেকে লাশ নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি প্রশাসনের কড়াকড়িও শিথিল করা হয়েছে। তাই লাশ এখন আর এ্যাম্বুলেন্সে নিতে হচ্ছে না।
শেবাচিম হাসপাতালে বেসরকারি আ্যম্বুলেন্স পরিচালনা করেন জাকির হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কারোনা পরিস্থিতি শুরুর পর লাশ পরিবহনের ওপর প্রশাসনের কড়া নজরদারি ছিল। তখন লাশ পরিবহনের জন্য চালকদের পিপিআই, হ্যান্ড গোলভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই রোগীর মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায়, সেই কড়াকড়িতে শিথিলতা এসেছে। এখন কর্তৃপক্ষের একটাই লক্ষ্য কত দ্রুত লাশ হস্তান্তর করা যায়। কারন শয্যার অপেক্ষায় করোনা রোগীর দীর্ঘ লাইন লেগে আছে। এখন স্বজনরা লাশ আ্যাম্বুলেন্সে নেয় না। যে যেভাবে পারছেন, সে সেই ভাবে লাশ নিয়ে যাচ্ছেন।
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Bhola District ,Barisal ,Bangladesh ,Bengali ,Bangladesh General ,Patuakhali District ,India ,Barisal District ,Zakir Hussain ,King Mia ,Wood Barisal ,Johne Jhalakhati ,Barisal Shere Bengali Medical College Hospital ,Police Administration ,Shere Bengali Medical College Hospital ,Barisal Sher ,Bengali Medical College Hospital ,Barisal City ,Barisal District New ,Patuakhali District New John ,Bhola District New John ,District New John ,Jhalakhati District New John ,General Hospital Word ,Bengali Medical College ,Hospital Word ,Cope Headquarters Hospital ,General Hospital ,Hospital Ward ,Hospital Senior Medical ,Headquarters Hospital New Word ,For Wood ,Business Avalanche ,Hospital Word Master ,போலா மாவட்டம் ,பாரிசல் ,பங்களாதேஷ் ,பெங்காலி ,இந்தியா ,பாரிசல் மாவட்டம் ,ஜாகிர் ஹுசைன் ,ஜநரல் மருத்துவமனை ,மருத்துவமனை வார்டு ,க்கு மரம் ,

© 2024 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.