সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ২১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউনের সকল বিধিনিষেধ কার্যকর করতে মাঠে তৎপর রয়েছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে এ পর্যন্ত ১০ ব্যক্তিকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয়েছে বেশ কিছু অটোরিকশা ও ছোট যানবাহন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লকাউনের প্রথম দিন ভোর থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সিঙ্গাইর উপজেলা তথা মানিকগঞ্জে প্রবেশ ও বহির্গমন ঠেকাতে হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাট-বাজারসহ উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা, সহকারী পুলিশ সুপার (সিঙ্গাইর সার্কেল) রেজাউল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্লা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাট-বাজারসহ লকডাউনের আওতাভুক্ত সব ধরনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও দূরপাল্লার গণপরিবহন।
শনিবার (৩ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা, সহকারী পুলিশ সুপার (সিঙ্গাইর সার্কেল) রেজাউল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্লা। লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।
এসময় সড়কে দুই একটি ছোটখাটো যানবাহন ছাড়া চলাচল করতে দেখা যায়নি লকডাউনের আওতাভুক্ত দুরপাল্লার ভারি কোনো যানবাহন। এছাড়া পাড়া মহল্লা ও গলির ভেতরে অবস্থিত দুই একটি দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার এবং ওষুধ ফার্মেসী ব্যতিত বন্ধ ছিল উপজেলার সব ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে থানার পুলিশ সদস্যরা।
শনিবার অভিযান চালিয়ে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন লঙ্ঘনের অপরাধে উপজেলার ধল্লা বাজারের হোটেল মালিক সোলাইমানকে দুই হাজার, চারিগ্রামের লালমুদ্দিন, আক্কাস আলী, শওকত, কামরুলকে তিন হাজার ও গোবিন্দল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচশত টাকা জরিমানা করা হয়। এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুনা লায়লা।
এছাড়া এদিন হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উপজেলার বায়রা বাজার, চারিগ্রাম বাজার ও সাহরাইল বাজারে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা। এসময় করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করায় চার ব্যক্তিকে চার হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ ও আদায় করা হয়। এর আগের দিন ২ জুলাই উপজেলার জামসা ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিযান চালান তিনি। এ সময় বিয়ে বাড়ির মালিককে দশ হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে কঠোর অবস্থানে উপজেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে জরিমানা। লকডাউন বাস্তবায়নে যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই করা হচ্ছে। করোনা থেকে নিজে ও দেশকে বাঁচাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
সহকারী পুলিশ সুপার (সিঙ্গাইর সার্কেল) রেজাউল হক বলেন, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান স্যারের নির্দেশে লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন সড়কে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় বেড় হওয়ায় এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে বেশ কিছু অটোরিকশা ও ছোট যানবাহন। এছাড়া অনেক পথচারীকে আটক করার পর সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাতদিনের সেরা