comparemela.com


জাতীয় পার্টির শনির দশা কাটছেই না। পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পারিবারিক কলহ তাঁকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে রেখেছে। এই কলহ যতটা না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও তাঁর প্রয়াত ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পদকেন্দ্রিক। সর্বশেষ গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের দেওয়া বক্তব্যে এই বিরোধ আবারও চাড়া দিয়ে ওঠার ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিদিশা বলেন, ‘রওশন এরশাদ যেন আজীবন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আমি সেটাই চাই।’
২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সময়ে জাতীয় পার্টি সর্বশেষ বড় ধরনের সংকটে পড়েছিল। তখন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জি এম কাদেরের বিরোধ অনেকটাই প্রাকাশ্যে এসেছিল। রওশন ও কাদের দুজনই চেয়ারম্যান পদের দাবিদার ছিলেন। জাপার জ্যেষ্ঠ নেতারা কৌশলে সে যাত্রায় পার্টিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন। রওশন এরশাদের জন্য চিফ প্যাট্রন পদ সৃষ্টি করে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান করা হয়।
অন্যদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন রওশন ও কাদের। ওই সময়েও সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা আর জি এম কাদেরকে উপনেতা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হন।
এর পরপরই অনেকটা হঠাৎ করে পর্দায় আবির্ভাব ঘটে বিদিশা সিদ্দিকের। এরশাদ ট্রাস্টের প্রধান ট্রাস্টি প্রয়াত মেজর (অব.) খালেদের সহযোগিতায় এরশাদের ছেলে এরিখের মায়ের দাবি নিয়ে এরশাদের বারিধারার বাসায় প্রবেশ করেন বিদিশা। এ সময় বিদিশার প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন জাপার কেন্দ্রীয় নেতা কাজী মামুন। বারিধারার বাসায় প্রবেশ করার ১৫ দিনের মাথায় বিদিশা বারিধারার বাসায় কর্মরত এরশাদ আমলের সব কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন। ধীরে ধীরে বিদিশা ট্রাস্টের কমিটি বদল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন এবং কাজী মামুনকে ট্রাস্টের কমিটিতে স্থান দেন। যদিও এরশাদের অসিয়তনামায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদিশা সিদ্দিক যেন কখনো বারিধারার বাসায় প্রবেশ করতে না পারেন।
একসময় রওশন এরশাদ ও বিদিশা সিদ্দিকের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। প্রচার রয়েছে, রওশন এরশাদের চাপেই এরশাদ বিদিশাকে তালাক দিতে বাধ্য হন। তবে বর্তমানে রওশন ও বিদিশা এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। রওশন এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও তাঁদের মধ্যে একাধিক গোপন বৈঠকের কথা জানা গেছে। অতীতের বৈরী সম্পর্ক হঠাৎ কেন বন্ধুত্বপূর্ণ হলো? জাতীয় পার্টিতে চাউর আছে, এ বন্ধুত্বের নেপথ্যে রয়েছে এরশাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া এরশাদের সম্পদের বিবরণ এবং তিনি ট্রাস্টে যে সম্পদ দান করেছেন দুটির মধ্যে গরমিল রয়েছে। হলফনামায় ইউনিয়ন ব্যাংকে এরশাদের শেয়ারের কথা উল্লেখ থাকলেও ট্রাস্টে ব্যাংকের শেয়ার তিনি দান করেননি। সূত্র মতে, ইউনিয়ন ব্যাংকে এরশাদের ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় এরশাদের আরো কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা ট্রাস্টে দেওয়া হয়নি।
এরিখ ও সাদ এরশাদের সন্তান। জাতীয় পার্টিতে আলোচনা আছে, পার্টির সাত নেতার কাছে এরশাদের আরো প্রায় ৩০০ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকসহ এরশাদের বিপুল সম্পদ নিজেদের কাছে নিতে হলে রওশন এরশাদ ও বিদিশার ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। একটি সূত্র বলছে, এরশাদের সম্পদের দিকে তাকিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাও এরই মধ্যে রওশন ও বিদিশার দিকে ঝুঁকেছেন এবং তাঁরা জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছেন।
ছেলে এরিখের সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। ফাইল ছবি
সূত্র বলছে, রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ও গোলাম মসীহকে মহাসচিব করে নতুন জাতীয় পার্টি গঠন করতে এগোচ্ছেন বিদিশা সিদ্দিক, তাঁকে নেপথ্যে সহযোগিতা করছেন এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সাবেক জাপা নেতা কাজী মামুনুর রশিদ। যদিও এ বিষয়ে রওশন এরশাদ বা গোলাম মসীহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিদিশা সিদ্দিকের দেওয়া বক্তব্যে রওশন এরশাদকে আজীবন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দেখতে চাওয়ার প্রসঙ্গে গত সোমবার কালের কণ্ঠ তাঁর কাছে জানতে চায়—জাতীয় পার্টির তো একটি কাঠামো রয়েছে, সংগঠনের একজন চেয়ারম্যান রয়েছেন, এ অবস্থায় আপনি রওশন এরশাদকে কিভাবে আজীবন চেয়ারম্যান চান? জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির বর্তমান কমিটি অবৈধ। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন।’ এরপর বিদিশা বলেন, ‘আমি আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুইয়া (যিনি সংগঠনের আইনি বিষয়াদি দেখাশোনা করেন) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদিশা সিদ্দিকের বক্তব্য সঠিক নয়। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাপার সম্মেলনের আগে জনৈক ব্যক্তি সম্মেলন নিয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। আদালত সম্মেলনের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি। রিট পিটিশন শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন সম্মেলনের এক মাস পরে এবং উচ্চ আদালত রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন। বৈধভাবেই জাপার সম্মেলন ও কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জাপা দেশের ১২ নম্বর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সম্মেলন করা সম্ভব হতো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিদিশা সিদ্দিক জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্যও নন, তাঁর কথায় কর্ণপাত করাটা সময়ের অপচয় মাত্র।’
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য জাতীয় পার্টির চিফ প্যাট্রন ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি একান্ত সহকারী মামুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়ে ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে করোনাভাইরাসের সময়ে তিনি সতর্ক চলাফেরা করেন, অনেক সময় ফোন রিসিভ করেন না।’
জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কেন ভাঙবে? জাতীয় পার্টি একটি সংগঠিত দল, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল। কিছু লোক ম্যাডাম রওশন এরশাদের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। রওশন এরশাদ এই শেষ বেলায় এসে দল ভাঙার দায়িত্ব নিয়ে কলঙ্কিত হবেন না, তিনি রাজনীতিতে অভিজ্ঞ নেত্রী। তিনি বুঝেশুনেই এগোবেন। দল ভাঙতে চাইলে তিনি আগেই ভাঙতে পারতেন। তিনি তা করেননি।’
জাতীয় পার্টির বেশির ভাগ নেতাকর্মী জি এম কাদের অনুসারী হলেও সার্বিকভাবে পার্টি এগোতে পারছে না। দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছেন। রাজনীতিতেও জাতীয় পার্টি একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। প্রকৃত বিরোধী দলও হতে পারছে না আবার সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে সুবিধা আদায়—কোনোটাই করতে পারছে না। রাজনীতির এমন অবস্থায় ধীরে ধীরে বরং জনগণের আস্থা হারাচ্ছে দলটি।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের দুটি উপনির্বাচন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে প্রবলভাবে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে জাতীয় পার্টি। যদিও পার্টি ওই দুই প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।
এই রকম আরো খবর

Related Keywords

Qatar ,Japan ,Faisal Chisti ,Vidisha Baridhara ,Kazi Feroz Rashid ,Islam Bhuiyan ,Saad Ershad ,Egocchena Vidisha Siddique ,Vidisha Siddique ,Ershad Baridhara ,Rawsan Ershad ,Muhammad Ershad ,Rowshan Ershad ,Vidisha Trust Committee ,Japan Co ,National Party Central ,National Party Saturn Phase ,National Parliament ,National Party ,Kazi Mamun Trust Committee ,Siddique National Party ,Xi National Parliament ,National Partya Lawless ,They National ,Political Her ,Ireport Party ,Friday Muhammad Ershad ,Saturday National Press ,Rowshan Ershad May ,National Party Chairman ,Both Chairman Post ,Japan Senior ,Rawsan Ershad For Chief ,Ershad Trust ,Japan Central ,Working Ershad ,Vidisha Siddique May ,Bidisha United ,President Ershad ,Rawsan Ershad Chairman ,Messiah Secretary ,New National Party ,Ershad Trust Chairman ,Kazi Naming Rashid ,June National Press ,His View ,Secretary Ink Islam Bhuiyan ,For National Party Chief ,Naming Rashid ,Japan Co Chairman Kazi Feroz Rashid ,Madam Rawsan Ershad Name ,கத்தார் ,ஜப்பான் ,ஃபேஸல் சிஸ்டி ,கேஸீ பேரோஜ் ரஷித் ,இஸ்லாம் பூயான் ,ஸாட் அர்‌ஶ்யாட் ,முஹம்மது அர்‌ஶ்யாட் ,ஜப்பான் இணை ,தேசிய கட்சி மைய ,தேசிய பாராளுமன்றம் ,தேசிய கட்சி ,தேசிய கட்சி தலைவர் ,ஜப்பான் மூத்தவர் ,அர்‌ஶ்யாட் நம்பிக்கை ,ஜப்பான் மைய ,ப்ரெஸிடெஂட் அர்‌ஶ்யாட் ,புதியது தேசிய கட்சி ,அவரது பார்வை ,

© 2024 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.