comparemela.com


প্রসঙ্গক্রমে কিছু কাল্পনিক ঘটনার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে।কারও কারও বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলেও যেতে পারে।তবে সে ক্ষেত্রে লেখক দায়ী থাকবে না ��
সবই আছে,সবাই আছে।কাঁধের উপর পাঁচ দাগ আছে।আছে পিছনে হাত বা পকেটে হাত দিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেটে যাবার রাজকীয় ক্ষমতা।এত সব ক্ষমতা আর পাঁচ দাগের ভারে ডান কাঁধটা কবে যেন একটু বাঁকা হয়ে গেছে খেয়াল করার সুযোগই হয়নি।ক্লাস ইলেভেন কলেজের ক্যাডার।মন যা চায় মোটামুটি সবই হাতের নাগালে পাওয়া যায়।খাকী পোশাক গায়ে জড়াবার প্রথম দিন থেকে এই দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা।এখন সবই হাতের নাগালে।এতসব কিছুর মাঝেও বুকের মধ্যে কোথায় যেন একটা শূন্যতা কাজ করে।কিছু যেন একটা মিসিং।শুধু আমার একার না মোটামুটি সবারই এক অবস্থা।
এমন প্রেমহীন,নারীবিবর্জিত পরিবেশে ‘ধুম’ ছবির সিলেট আঞ্চলিক শাখার নায়ক জনৈক শিক্ষককে মঞ্চস্থানে অধিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। ৮০ সিসির চায়না মোটর সাইকেলে আওয়াজ তুলে ম্যাডামকে পিছনে বসিয়ে এক রাশ ধূলো উড়িয়ে আমাদের সামনে দিয়ে চলে যায় শহরের দিকে।এ যেন ক্ষুধার্তের সামনে ‘চিকেন ফ্রাই’এ কামড় বসানোর মতই আদিম কোন নিষ্ঠুরতা।ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি যতদূর দেখা যায়। স্যার বা উনার মোটর সাইকেল কোনটাই এত সুন্দর ছিল না যে এত দূর পর্যন্ত আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে!হাউসে এসে কোন এক চিপায় সিগারেটের ধোঁয়া উড়াই আর ‘ম্যায় হু না’ ছবির প্লট বানাই।
ব্রেকফাস্টের পর টার্ণ আউট চেকিং এর জন্য ফলইনে দাঁড়িয়ে অযত্নে ধূলা পড়া সু এর ‘টো’ টা প্যান্ট উচিয়ে পিছনে মোজার সাথে যত্নসহকারে ঘষছি।এই পদ্ধতিটা বেশ কাজের।এটা না থাকলে ক্যাডেটদের কপালে দুর্ভোগের পাল্লাটা আরেকটু ভারী হত এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়।এরই মধ্যে কলেজের হিসেবে বেশ অস্বাভাবিক একটা ঘটনা চোখে পড়ল।সবুজ সালোয়ার কামিজ পড়া একজন উঠতি বয়সী তরুনী আমাদের ফলইনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।চলনে কেমন যেন একটা ছন্দ মিশে আছে এবং তিনশত জোড়া চোখ কাহারবা তালের সেই ছন্দময়ী চলনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কতগুলো মন যে তখন প্রার্থনারত ছিল “ইশ এইটা যেন আমাদের ম্যাডাম হয়!” তার সঠিক হিসাব জানা না গেলেও সংখ্যা যে নেহায়েত কম হবে না সেটা তো বলাই যায়।যা হোক সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তরুনী একাডেমিক ব্লকে প্রবেশ করলেন।এবং এতগুলো কঁচি হৃদয়ের প্রার্থনাতে সাড়া না দিয়ে স্বয়ং বিধাতা নিজেও থাকতে পারলেন না। সবুজ সালোয়ার পড়া তরুনীটিকে আমাদের ম্যাডাম বানিয়ে দিলেন।সদ্য ইউনিভার্সিটি পাশ করা উঠতি বয়সের তরুনীটি কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট আলো করে আমাদের ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত করার মূল্মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে লালপেড়ে সাদা শাড়ী পড়ে যথারীতি একাডেমীক ব্লগকে ধন্য করা শুরু করলেন পরের দিন থেকে। ম্যাডামের সেই কাহারবা তালের চলুনীতে কত মানব জনম যে পৃথিবীর আলো দেখার বিন্দুমাত্র আশাও পোষন করতে না পেরে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে তার হিসাব কে ই বা রাখে? সময়ের পালে হাওয়া লাগিয়ে সময় ছুটে চলল,সুরমা নদীতে লাগল নতুন জোয়ার। সময়ের এই ছুটে চলাতে আমাদেরই বা বসে থাকা কেন?আমাদেরও বয়স বাড়তে লাগল।ইলেভেন থেকে টুয়েলভ।কাঁধে এখন ছয় দাগ,অনেকের আবার চাঁদ তারা শোভা পায় কাঁধে।এখন আর কেউ ক্যাডার না,নেতা।জুনিওর প্রিফেক্টরা রাস্তা পরিষ্কার করে সব ঠিকঠাক করবে তখনই রাস্তায় নামবে ক্লাস টুয়েলভ।চালচলনে একটা ভারিক্কি ভাব চলে আসে।এলোচুলো ইংরেজীর ম্যাডাম ততদিনে আমাদের ইংরেজী শিক্ষায় বেশ ভালই শিক্ষিত করে তুলেছেন।এর ফাঁকে তিনি এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিস হিসেবে একজনের বিশেষ যত্নও নেয়া শুরু করে দিয়েছেন।আমাদের সালেকীন,ছেলে হিসেবে বেশ সুদর্শন,লম্বা প্রায় ছয় ফুট,গায়ের রঙ ফর্সা না হলেও কালো বলা যাবে না।আর ‘চোরা লিড’ হাসিটাতো বোনাস।প্রেপ টাইমে ম্যাডাম সালেকীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,চুল আচড়াও না কেন?শার্টের ইস্ত্রিতে কোন ঝামেলা থাকলেও তাতে ম্যাডামের আপত্তি। কেমন যেন বেশ রোমান্টিক একটা আবহাওয়া বইতে লাগল। আর ক্যাডেট দের তিলকে কাঠাল বানানোর মহাগুনটির কথা না বললেই তো নয়।সেটাও সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে সমান বেগে চলতে থাকল।সময় পেলেই ম্যাডাম পাশে এসে দাঁড়িয়ে খোঁজ নেয় সালেকীনের।অপরদিকে অন্তরে আঘাত পেয়ে বিরহী মনের জ্বালা মেটাতে হাউসে এসে সিগারেটে শক্ত টান দেয় “ম্যায় হু না” র নায়ক চরিত্র মনে করা জনৈক ক্যাডেট।
এথলেটিক্স এর সময় ম্যাডামের চোখে ওঠে কালো সানগ্লাস,গায়ে জড়ায় কালো ব্লেজার।লালপেড়ে সাদা শাড়ি,কালো ব্লেজার এবং কালো গ্লাসের সাথে কাহারবা তালের ছান্দনিক চলন তো আছেই!!!সুযোগ পেলেই আমরা পিছু নেই ম্যাডামের।ছান্দিক চলন দেখি,মাঝখান থেকে কেউ একজন গুনগুন করে গলায় সুর তোলে “চুমকি চলেছে একা পথে”।যেন এলাকার দাদারা এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার পিছু নিয়েছে।এত সব কিছুই সালেকীনের মনে নেহায়েত মজা ছাড়া প্রেমের দাগ কাটতে না পারলেও জনৈক ক্যাডেটের মনে যথারীতি রক্তক্ষরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল।তাইতো সিগারেটের শক্ত টানে তখন আর মন শান্ত থাকে না।আরও শক্ত কিছু চাই।বন্ধুবরের মন শান্ত করার মহৎ কার্য সম্পাদনের জন্য সেদিন মেহগনি গাছের শুকনো পাতাকেই সবচেয়ে উপাদেয় বলে মনে হয় আমাদের কাছে।এবং বলতে হবে মেহগনির শুকনো পাতার ভেষজ গুণ অবশ্যই খাঁটো করে দেখার মত না।
দিন যায় কথা থাকে।আবার কিছু কথা হারিয়ে যায়।হারিয়ে যায় সিলেটের পূব আকাশে সূর্য দেখা ভোর কিংবা সন্ধ্যার সাতরঙা পশ্চিমের আকাশ। এগুলো সব কিছুই নতুন একটা নামে সামনে এসে দাঁড়ায়;যার নাম হয়ে যায় “স্মৃতি” । না ধরা যায়, না ছোঁয়া যায়। ছলনাময়ী সুন্দরী কোন রমণীর চুড়ির “টুংটাং” বললেও বোধকরি ভুল বলা হবে না।চুড়ি শোভিত সেই হাতটিকে একবার ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বে সেটা ছোঁবার নয়।তবুও মন শুধু তার কথাই মনে করে।তার “চুড়িভাঙ্গা” শব্দের হাসিটা যেন বুকের কোথায় একটা সুখের মত ব্যাথা জাগিয়ে তোলে।
সালেকীনের সাথে আমার শেষ দেখা ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরের শেষের কিংবা অক্টোবরের শুরুর দিক হবে।এর কয়েকদিন পর ওর ফ্লাইট, তুরস্ক চলে যাবে গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ নিয়ে।(বর্তমানে ফিনল্যান্ডে আছে এক বছরের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে)। অন্যদিকে সেই সময়টা আমার জন্য মারাত্নক খারাপ ছিল।TSC তে বসে আছি আমি,সালেকীন,রাজন,আফতাব। এরপর সালেকীন এর সাথে আর দেখা হওয়ার চান্স নাই।সেদিন সারা রাত চষে বেড়ালাম ঢাকা ভার্সিটি আর বুয়েটের পুরো এলাকা।মধ্য রাতে হলের ছাদে আড্ডা এরপর পলাশীর চা।ভোরের দিকে বুয়েটের হলে গিয়ে ঘুম দিলাম।সকালের দিকে আবার যে যার গন্তব্যে ছুটলাম।সেদিনের পর অনেকদিন দেখা নাই ওর সাথে।কলেজের প্রথম তিন বছর আমরা পাশাপাশি রুমে ছিলাম।পরের তিন বছর রুমমেট।আমি,সোলায়মান,সালেকীন টানা তিন বছরের রুমমেট।রুমমেট ঠিক করার বেলায় আলাদা করে বলার কিছু ছিল না,সবাই জানত আমরা আবার রুমমেট হব।সকালে ঘুম থেকে উঠেই এদের চেহারা দেখতাম আগে এখন আর দেখা হয় না।অনেকদিন…যদিও বাস্তবিক দূরত্ব দূরে সরিয়ে রেখে আমরা ক্যাডেটরা সবাই “দুরত্ব যতই হোক কাছে আছি” মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী,তারপরও মাঝে মাঝে মন চায় সবাই মিলে,সেই তিপ্পান্ন জন মিলে বসি কোথাও,গল্প আড্ডা আর গানে থামিয়ে দেই সময়ের ছুটে চলা।
যাই হোক,অনেকক্ষণ স্মৃতির বুকে টোকাটুকি করলাম। এবার আসল কথায় আসি। আজকের এই অর্থহীন প্রলাপের মোটামুটি নায়ক চরিত্রে থাকা সালেকীন ছেলেটির আজ জন্মদিন।‘বার্থডে বয়’ হিসেবে নায়ক চরিত্রের রোলটা সে অবশ্যই পেতে পারে।এটা তার আজকের দিনের অধীকার পর্যায়ে পড়ে।ফেসবুক ওয়াল খেয়াল করলাম সেখানে অলরেডী পার্টি শুরু হয়ে গেছে।এখন তাহলে একটা আবদার এর কথা বলি।সামনে গ্রীষ্মের বন্ধ আছে।চল দেশে যাই,সবাই আবার একসাথে হই,বৃষ্টিতে শ্যাম্পু মাথায় দিয়ে ভিজি,কলেজে যেমনটা করতাম।জানি তুই চেষ্টা করবি,কিন্তু এখন থেকে চেষ্টাটাতে আরো গতি বাড়া।।জন্মদিনের এই পিক আওয়ারে বর্ষবরণের কোন এক অনুষ্ঠানে পিকে স্যার এবং ম্যাডামের দ্বৈত কন্ঠে গাওয়া রোমান্টিক বাংলা গানের সুরে সুর মিলিয়ে বলি “যেকানেই তাকো বালো তেকো…” ঠিক সেটাই,ভাল থাকিস অনেক ভাল।জানি তোর মধ্যে নিজে ভাল থাকার এবং অন্যকে ভাল রাখার গুণটা আছে এরপরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া…
মধ্যরাতের ঢাকা, অবাক চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে সারা পৃথিবী। রাস্তার পাশে কোন এক চায়ের দোকানে বেশ কিছু ছেলেকে দেখা যাচ্ছে চা-টা খাচ্ছে।চায়ে দুধ,চিনি বেশী। অর্থহীন কিছু আলাপে তারা মনে প্রাণে ব্যস্ত এবং নিমগ্ন।থেকে থেকে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। চুমুক দেওয়ার মুহুর্তের সেই চেহারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষগুলো আজকের এই মধ্য রাতে ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছে…থামিয়ে দিয়েছে সময়ের ছুটে চলা।
ট্যাগসমূহ:জন্মদিন
৬,৪৫৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত লেখা বা মন্তব্য সম্পূর্ণভাবেই লেখক/মন্তব্যকারীর নিজস্ব অভিমত। এর জন্য ক্যাডেট কলেজ ব্লগ কর্তৃপক্ষকে কোনভাবেই দায়ী করা চলবেনা।
৫৮ টি মন্তব্য : “দিন যায় কথা থাকে…”

Related Keywords

China , Finland , Turkey , Jakarta , Jakarta Raya , Indonesia , Dhaka , Bangladesh , , Party Start , Cadet College , Or Center , College English Department Light On Us , Class Eleven College , Dhaka Regional Branch , Royal Power , Where May , Ish It May Us Madam , New University , College English Department Light , Earth Light View , English Madam , Black Blazer , Not Madam , Whatever May , Moonlight , Being Earth Best , சீனா , பின்லாந்து , வான்கோழி , ஜகார்த்தா , ஜகார்த்தா ராய , இந்தோனேசியா , டாக்கா , பங்களாதேஷ் , கட்சி தொடங்கு , கேடட் கல்லூரி , அரச பவர் , புதியது பல்கலைக்கழகம் , கருப்பு பிளேஸர் , நிலவொளி ,

© 2024 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.