comparemela.com


22nd Jul, 2021
কোরবানি ঈদের ঠিক আগ দিয়েই বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার বাংলা ভার্সনের এক প্রতিবেদনে দেখলাম, ‘চার বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক’কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার ‘কৃতিত্ব’ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন প্রবাসে সাংবাদিকতার সূত্রেই ভ্যাক্সিন-কূটনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের আলাপ-আলোচনা অনুসরণ করছিলাম। পুরো প্রক্রিয়াটি জানার কারণেই আমার মতো অনেক প্রবাসী ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কিছুটা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ হয়েছেন। 
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত যেকোনও বাংলাদেশির কৃতিত্ব ও দক্ষতাতেই আমরা প্রবাসীরা গর্ব অনুভব করি। ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রেও সত্যিকার অর্থেই ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের কূটনীতিক এবং দেশপ্রেমিক একদল প্রবাসীর সংঘবদ্ধ প্রয়াস অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তারমানে এই নয় যে, ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যভিত্তিক কল্পিত ‘কৃতিত্ব’ মেনে নিতে হবে, বিশেষত সেটি যদি হয় প্রচারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাতে যদি আরও অনেকের অবদানকে অস্বীকার কিংবা ছোট করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সুপার হিরো’ তৈরি করতে গিয়ে ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে পাঠকদের ভুল তথ্য দিয়ে যেমন প্রতারিত করা হয়েছে, তেমনি সরকার এবং এক্ষেত্রে অবদান রাখা অন্যান্য প্রবাসীদেরও খাটো করা হয়েছে।    
‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভ্যাক্সিন পেতে চার প্রবাসীর কৃতিত্ব’ নিয়ে এ ধরনের গোয়েবলসীয় প্রচারণার পেছনে বাংলাদেশের একজন চিকিৎসকের (যার যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা করার সনদ জোটেনি, এমনকি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাও করেন না) ভূমিকা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, যিনি নিজের রাজনৈতিক  ফায়দা হাসিলের অভিপ্রায়ে এ ধরনের প্রচারণায় লিপ্ত। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন তার এই অপতৎপরতা স্বীকারও করেছেন। তারপরও কেন সেই মিথ্যাচার থামেনি- এ জিজ্ঞাসা অনেক প্রবাসীরই রয়েছে। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ শুরু করি। 
গতবছর করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে আমরা হারিয়েছি। বিশেষত আমার বসবাসের শহর নিউ ইয়র্ক হয়ে উঠেছিল মৃত্যু উপত্যকা। কাজেই  এখানে অবস্থানরত প্রবাসীরা আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ছিল- ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে নিয়ে, সেখানে রেখে আসা স্বজন-পরিবার-পরিজন নিয়ে। 
কেবল দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার করার জন্য নয়, বাংলাদেশের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকার কারণেও ভ্যাকসিন বা টিকার বিষয়টি শুরু থেকেই অনুসরণ করছিলাম। সে যাইহোক, চার প্রবাসীর ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ক্যাপিটল হিল, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং হোয়াইট হাউজে আমার সূত্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ওই প্রতিবেদনের বিস্ময় প্রকাশ করেন। পাশাপাশি নিজেদের ‘বিব্রত’ হওয়ার কথাও জানান। 
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের সংকটের শুরুর দিকটা হয়তো সবারই মনে আছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজের জন্য চুক্তি করা হয়। প্রথম চালান দেশে এলে নিবন্ধনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। টিকার সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে বা তারও আগেই থেকেই বিকল্প টিকার জন্য উৎস খুঁজছিল সরকার। চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনাসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সসহ অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  এছরের ১২ মে প্রথম দফায় উপহার হিসেবে চীন ৫ লাখ সিনোফার্মের টিকা পাঠায়। ২৭ মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব সবুজ সংকেত পায়। চীন থেকে ১৩ জুন আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পায় বাংলাদেশ।   
কাজেই এ কথা স্পষ্ট যে, মে মাসের শুরুতেই টিকা পেতে মরীয়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই সূত্রেই ওই মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে তার ঘনিষ্ঠ কমিউনিটি এবং রাজনৈতিক নেতা, সাবেক আমলা এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের ফোন করা শুরু করেন। তিনি কোভ্যাক্স-এ যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দকৃত অনুদানের টিকা পেতে হোয়াইট হাউজে দেনদরবার করার জন্য। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তখন তার ঘনিষ্ঠজনদের একথাও বলেন, ভারতীয়-আমেরিকানরা দেনদরবার চালিয়ে হোয়াইট হাউজকে ভারতের জন্য ভ্যাকসিন বরাদ্দে সম্মত করিয়েছে। ফলে বাংলাদেশিদেরও শক্ত লবিং করা দরকার। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই যোগাযোগের পর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ক্যাপিটল হিলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত শহীদুল বিভিন্ন ব্যক্তিক এবং সাংগঠনিক কানেকশনও ব্যবহার করা শুরু করেন। তিনি বেশ কয়েকজনকে ইমেইল, ফোন, টেক্সট-এ অনুরোধ করেন দেশের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। 
রাষ্ট্রদূত তার অনুরোধে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছিলেন, বিনামূল্যে নয়, প্রয়োজনে নির্ধারিত দামেই বাংলাদেশ ভ্যাকসিন কিনে নিবে। পেনসিলভেনিয়া প্রবাসী এবং বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর, সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি ও চ্যানেল আই-এর উত্তর আমেরিকার পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, আমেরিকা-বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ সালাম, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যামশায়ারের স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল খান, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও নিউ জার্সির প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন্নবী, মোহাম্মদ রহমান, লস অ্যাঞ্জেলসের মমিনুল হক বাচ্চুসহ অনেক প্রবাসী রাষ্ট্রদূতের এ আহ্বানে আলাদা আলাদাভাবে নিজেদের লবি অনুযায়ী যোগাযোগ করেন হোয়াইট হাউজ এবং ক্যাপিটল হিলে।
২০২১ সালে জুন মাসে প্রবাসীদের এক সমাবেশে মার্কিন সিনেট নেতা এবং সিনেট সদস্য চাক শ্যুমার বাংলাদেশকে বেশি ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবেন বলে অঙ্গীকার করেছিলেন।
 
প্রায় একইসময়ে নিউ ইয়র্কে ১১ জুন প্রবাসীদের এক সমাবেশে মার্কিন সিনেট নেতা এবং সিনেট সদস্য চাক শ্যুমারও অঙ্গীকার করেন, বাংলাদেশকে যতটা বেশি সম্ভব ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। 
এসময়ে নিরবে চলা আরেকটি উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি সুফল এনে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে। সেটি ছিল  ড. মোমেনের পরিচিত হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র উপদেষ্টা জায়ান সিদ্দিক এবং তার বাংলাদেশি-আমেরিকান বাবা ড. মুস্তাক আহমেদ মামুনের যোগাযোগ। একই সাথে নিউ জার্সির ড. এ এফ এম হক ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা  বাংলাদেশের ভ্যাকসিন নিশ্চিতের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।  এছাড়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের ঘনিষ্ঠ আরেক প্রবাসী ড. মেহেদী আনোয়ারও ভ্যাকসিনের জন্যে হোয়াইট হাউজে আবেদনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। 
এসব উদ্যোগ নিয়ে গণমাধ্যমে আগাম প্রচারণা ছিল না। সংশ্লিষ্ট সবাই বাংলাদেশকে কঠিন এক সঙ্কট থেকে বাঁচাতে বাইডেন প্রশাসনকে সম্মত করানো নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন। ফিলাডেলফিয়ার চিকিৎসক এবং সমাজ-সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউদ্দিন আহমেদও সবসময় বাংলাদেশের বিপদে-আপদে সোচ্চার থাকেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলারও ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সরব রয়েছেন।  আর তাই ভ্যাকসিন পেতে চার প্রবাসীর কৃতিত্বের দাবি সংক্রান্ত প্রচারণা অনেকের মনেই হতাশা তৈরি করতে পারে। 
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২ কোটি ৯ লাখ ৬২০ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা এসেছে। এর মধ্যে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬২০ ডোজ, মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ এবং চীনের সিনোফার্মের ৫১ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। 
যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যান্য দেশ থেকে টিকা পেতেও সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেখানকার প্রবাসীদের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। এখানে লড়াইটা দেশের মানুষের জন্য সম্মিলিতভাবে হচ্ছে।  
টিকা দেওয়ার  ধারাবাহিক কার্যক্রমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্স এবং সরাসরি বাইডেনের আগ্রহে এ যাবত বাংলাদেশে ৬১ লাখ ডোজ গেছে। ইউএস সিনেট লিডার চাক শ্যুমার প্রবাসীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেছেন, ৭০ লাখেরও অধিক ডোজ বাংলাদেশকে প্রেরণের জন্যে তিনি হোয়াইট হাউজে চেষ্টা চালাবেন।
ভ্যাক্সিন-কূটনীতি এবং নেপথ্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে কোনও প্রচার ‘কৃতিত্ব হাইজ্যাক’ এর প্রচেষ্টা মাত্র। এর ফলে এ মহৎ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিঃস্বার্থভাবে জড়িতরা বিব্রত এবং নিরুৎসাহিতও হন। 
Comment
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না। প্রতিক্রিয়া লেখার সময় লক্ষ্য রাখুন--
১. স্বনামে বাংলায় প্রতিক্রিয়া লিখুন।
২. ইংরেজিতে প্রতিক্রিয়া বা রোমান হরফে লেখা বাংলা প্রতিক্রিয়া গৃহীত হবে না।
৩. প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণ গৃহীত হবে না।
দরকারি ঘর গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে—
Name *

Related Keywords

New York ,United States ,Georgia ,Bengali ,Bangladesh General ,Bangladesh ,White House Hill ,Amla ,Khulna ,India ,New Jersey ,Washington ,White House ,District Of Columbia ,China ,Russia ,Bangladeshi ,Rashid Ahmed ,Neena Ahmed ,Mushtaq Ahmed Mamun ,Mehdia White ,Zia Ahmed ,Kh Mansour ,Us Senate Leader Chuck ,Government Foreign Ministry ,Foundation United States Branch ,Departmente Hill ,Program Under United States ,India Institute ,Us Bangladesh Alliance ,Communication Start On Foreign Ministry ,Commanders Forum ,Departmente White House ,Us Senate ,English Daily ,Many Bangladesh ,Superhero ,United States Medical ,Momen Her ,State Department ,Run Country ,April Country ,Ticker For ,For Communication Start ,Foreign Ministry ,Momen United States Her ,India For ,Communication Start ,Ambassador Her ,Barack Obama Advisor ,United States Branch President ,Secretary Abdul ,Commanders Forum President ,Pink Bari ,Bangladesh Alliance ,Georgia State Senator Sheikh Baby ,New State Representative ,New Jersey City ,Los Angeles Mominul Haque ,Chuck Bangladesh Report ,New York June ,Advisor Siddique ,Mushtaq Ahmed Mamun Communication ,Foreign Secretary Masud Bin ,Playback Introduction ,Leader Chuck ,புதியது யார்க் ,ஒன்றுபட்டது மாநிலங்களில் ,ஜார்ஜியா ,பெங்காலி ,பங்களாதேஷ் ,வெள்ளை வீடு மலை ,ஆம்லா ,கூழ்ந ,இந்தியா ,புதியது ஜெர்சி ,வாஷிங்டன் ,வெள்ளை வீடு ,மாவட்டம் ஆஃப் கொலம்பியா ,சீனா ,ரஷ்யா ,பங்களாதேஷி ,அரசு வெளிநாட்டு அமைச்சகம் ,இந்தியா நிறுவனம் ,எங்களுக்கு செனட் ,ஆங்கிலம் தினசரி ,சூப்பர் ஹீரோ ,ஒன்றுபட்டது மாநிலங்களில் மருத்துவ ,நிலை துறை ,வெளிநாட்டு அமைச்சகம் ,இந்தியா க்கு ,தூதர் அவள் ,பங்களாதேஷ் கூட்டணி ,புதியது ஜெர்சி நகரம் ,புதியது யார்க் ஜூன் ,வெளிநாட்டு செயலாளர் மசூத் பின் ,தலைவர் சக் ,

© 2024 Vimarsana

comparemela.com © 2020. All Rights Reserved.